তিনদিন ছুটির পর যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী
রমজান উপলক্ষ্যে বদলেছে অফিসের সূচি। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা যেন অফিস থেকে বাসায় ফিরে প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতার করতে পারেন সে লক্ষ্য ট্র্যাফিক পুলিশের পাশাপাশি ক্রাইম বিভাগও কাজ করছে সড়কে। পুলিশের নজর বিশেষ করে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
তবে সপ্তম রমজানে এসে চিত্র গেছে বদলে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর গতকাল রোববারও শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ছিল সরকারি ছুটি। স্বাভাভিকভাবে আজ (সোমবার) সকাল থেকে চাপ বেড়েছে সড়কে। রাজধানীর মূল সড়ক বাদেও যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী।
গত কয়েকদিন সকালে সড়কের অবস্থা স্বস্তিদায়ক থাকলেও আজকের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পাড়া-মহল্লার গলি থেকে শুরু করে ভিআইপি সড়কেও জট লেগে থাকতে দেখা যায় সড়কে।
সরেজমিনে রাজধানীর মোহম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, কাওরানবাজার, সোনারগাঁও, সাতরাস্তা, মহাখালী, বনানী, কাকলী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, গুলশান-১, গুলশান-২, লিংকরোড, প্রগতি সরণিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় যানজটের ভয়াবহ চিত্র।
যানজট থেকে বাদ যায়নি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও। মূল সড়কে নামার মুখে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে দেখা যায় গাড়িগুলোকে। কোথাও কোথাও যেন ঘুরছিল না গাড়ির চাকা।
আগারগাঁও মোড়ে গুলশানগামী মোটরসাইকেল আরোহী আরিফুল বলেন, রমজান মাসে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা করা হয়েছে। বিকেলে তাই সময় থাকতে বাসায় পৌঁছানো যাচ্ছে। সকালেও ক’দিন স্বস্তিতে অফিসে এলাম। আজ চিত্র উল্টো। আগারগাঁও থেকে মহাখালী ফ্লাইওভারে উঠতেই ৩৫ মিনিট। এরপর কাকলী, বনানী, গুলশান-২ পেরিয়ে অফিসে ঢুকতে দেড় ঘণ্টা।
বাস বা প্রাইভেটকার চালকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। মোন্নাফ আলী নামে এক বাস যাত্রী বলেন, মিরপুর-১০ থেকে বাসে উঠেছি। আগারগাঁও ক্রসিং থেকে বিজয় সরনি পার হতেই ৪০ মিনিট। গাড়ির চাকা ঘুরেছে তবে খুবই মন্থর গতিতে। একটা পর্যায়ে বাসের নিকট গন্তব্যের অনেক যাত্রীকে হেঁটে রওয়ানা করতেও দেখি। আমাকে অগত্যা বসে থাকতে হচ্ছে মতিঝিল যাবো বলে।
সড়কের অবস্থা দেখে হেঁটেই তেজগাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ইমরান আলী। মোহাম্মদপুর থেকে ছেড়ে আসা এক যাত্রী উড়োজাহাজ সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছানোর পর ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, রোজা রেখে কতক্ষণ হাঁটতে পারবো জানি না। তবে সড়কের যে অবস্থা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায়ও দেখছি না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগের শেরে বাংলা নগর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. তারেক সেকান্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। অফিস টাইম ও স্কুল টাইম একই সময় হয়ে গেছে। যে পরিমাণ যানবাহন সড়কে সকাল আটটা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে নামছে তা সামাল দেয়া কঠিন। শুধু শেরে বাংলা নগর এলাকায় নয়, চারদিকে সকাল আজ বাজে গেছে। তবে সকাল সোয়া ১০টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। রাস্তা এখন সচল।
ট্র্যাফিক গুলশানের (ট্রাফিক-মহাখালী জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম রনি জানান, মহাখালী এলাকার অবস্থা ভালো না। তিনদিন ছুটি ছিল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাস বিভিন্ন জেলার গন্তব্যে ছাড়ার চাপ বেড়েছে। তাছাড়া ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে যানজট বেড়েছে।
ট্রাফিক-গুলশানের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। কিছুই করার নাই। গাড়ির পেছনে গাড়ি। এক ইঞ্চি জায়গাও তো খালি রাখার উপায় নাই। সামনের গাড়ি এগুতে না পারলে পেছনের গাড়ির তো সামনে যাবার উপায় নাই। আমাদের ট্রাফিকের সব সদস্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। যানজট বা গাড়ির চাপ কমাতে। তবে আজকে একাধিক স্থানে ভিভিআইপি মুভমেন্ট আছে। তার উপর তিনদিন পর মানুষ ঘর থেকে বেশি বের হয়েছে। তাই গাড়ির সংখ্যাও বেশি।
আরও পড়ুন
রমজানে ঢাকার যানজট নিরসনে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, সেবা সংস্থা, ব্যবসায়ী, দুই সিটি করপোরেশনসহ ২২টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। রমজান শুরুর আগে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, যানজট লেগেই থাকে এবং জনসমাগম বেশি এমন শতাধিক স্পট চিহ্নিত করেছে ডিএমপি। ইফতারের আগ মুহূর্তে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন ও প্রতিটি থানা পুলিশকে এ সময়ে ট্র্যাফিক সদস্যদের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে থানা পুলিশকে ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। সব ট্র্যাফিক ও ক্রাইম বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। এ ছাড়া ট্র্যাফিক বিভাগে ফোর্স বাড়ানো হচ্ছে। রমজানে সড়কে উন্নয়নকাজ এবং খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ওয়াসা, তিতাস, সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে সোয়া ২ কোটি মানুষ বাস করে। পুলিশ এখানে রাতারাতি যানজট সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। তাই সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
জেইউ/এনএফ