একসময় হয়েছিলেন ভুক্তভোগী, এখন নিজেই করেন প্রতারণা
কুয়েত প্রবাসী লিটন মিয়া (৩৭) দেশে ফিরে ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত কাজ শুরু করেন। তারই ব্যবস্থাপনায় একজন বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসেনি, লিটনের পাওনা টাকাও পরিশোধ করেননি। এ ঘটনায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে নিজেই নামেন প্রতারণায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিসকাউন্টে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার টোপে ফেলেন।
সাশ্রয়ী দামের টিকিট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিতেন, আর সরবরাহ করতেন জাল টিকিট। অভিনব এ প্রতারণায় বিশেষ করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে লিটনের মাসিকের আয় ছিল প্রায় তিন লাখ টাকা। ডিসকাউন্টে এয়ার টিকিট বিক্রির অভিনব এ প্রতারণার অভিযোগে লিটনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার হওয়া বাকিরা হলেন, মো. বেল্লাল হোসেন (৪৭) ও মো. রিয়াজ শেখ (৩৫)।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি কম্পিউটার ও চেক বইসহ ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে ডিবি জানায়, কুয়েত প্রবাসী মজনু মিয়া গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার স্বজন হুমায়ুন কবিরকে জানান, তিনি মে মাসে দেশে ছুটিতে আসবেন। কুয়েত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়ার টিকিটের মূল্য বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে টিকেট কিনতে বলেন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে হুমায়ুন কবিরের কোনো পরিচিত ট্রাভেলস না থাকায় অনলাইনে সান ফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের খোঁজ পান। যেখানে ১৫% ডিসকাউন্টে (কুয়েত-ঢাকা-কুয়েত) টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ফেসবুকে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে টিকিট দিতে পারবে বলে জানায়।
ফোনে যোগাযোগ করে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হুয়ায়ুন কবির যাত্রাবাড়ী ধলপুর এলাকায় লিটন মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। দেখা করার পর হুমায়ুন কবির মজনু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও পাসপোর্টের ফটোকপি দেন। বাকি ৪৭ হাজার টাকা লিটনের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে পরিশোধ করে।
টাকা পাওয়ার পর চক্রটি মজনু মিয়ার হোয়াটসঅ্যাপে আল জাজিরা বিমানের টিকেটের কপি পাঠায়। পরবর্তীতে যাচাই করে দেখা যায় টিকেটটি জাল। এরপর লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে লিটন হোয়াটসঅ্যাপে মজনু মিয়াকে ব্লক করে দেয়।
গ্রেপ্তার লিটনের বিষয়ে ডিবি জানায়, চতুর্থ শ্রেণি পাস লিটন একসময় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ২০১২ সালে কুয়েতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশে ফিরে লিটন ভিসার কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে একজন লিটনের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশ চলে গেলে তিরি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
লিটন প্রাথমিকভাবে ফেসবুকে সানফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি পেজ খুলে ১৫% ডিসকাউন্টে টিকিট বিক্রির কথা বলে পোস্ট দেয়। চটকদার বিজ্ঞাপনে বিদেশে কর্মরত শ্রমজীবীরা আকৃষ্ট হয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের মধ্য থেকে লিটন টার্গেট বাছাই করে ডিসকাউন্ট প্রাইসে টিকিট বিক্রির টোপ ফেলেন।
লিটন কাস্টমারদের তার অফিস সিটি সেন্টারের লিফটের ১১তে বলে জানায় এবং কাস্টমারের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে বলে। লিটনের অবর্তমানে কাস্টমারদের সঙ্গে রিয়াজ কথা বলে। এয়ার টিকিট ক্রেতাদের টাকা পাওয়ার পর তাদের হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দেয়। গত কয়েক মাসে লিটন আনুমানিক চার লাখ লোকের সঙ্গে কথা বলে প্রতারণার টোপ ফেলেছে। প্রতিমাসে তার আনুমানিক আয় তিন লাখ টাকা।
এ বিষয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা প্রবাসীরা সাধারণত দেশে আসার সময় কম দামে টিকিট খুঁজেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১০-১৫ পার্সেন্ট ছাড়ে টিকিট বিক্রির ফাঁদ পাতেন লিটন। এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া লিটনের মাসিক আয় ৩-৪ লাখ টাকা।
অনেক প্রবাসী বিমানবন্দরে গিয়ে বোর্ডিংয়ের সময় জানতে পারেন টিকিটটি ভুয়া। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে এসে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন না। দেখা যায়, ৯৯ ভাগই ঝামেলা মনে করে অভিযোগ করেন না। তাই ডিসকাউন্ট দিলেই যাচাই না করে টিকিট কেনা যাবে না। আর প্রতারিত হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে হবে।
ডিবি প্রধান বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্যাকেজের অফার দেওয়া হচ্ছে। কম দামে ৩-৪ দেশ ঘুরানোর কথা বলা হচ্ছে। দেখা গেলো টিকিট ভুয়া, হোটেল বুকিংয়ের কাগজও ভুয়া দিয়ে দেবে। তাই এমন প্যাকেজ দেখলে যাচাই-বাছাই করে যেন টাকা দেন সবাই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রমজানে লেনদেন একটু বেশি হয়। তাই যারা বড় লেনদেন করবেন তারা যেন পুলিশকে অবহিত করেন। বড় অঙ্কের টাকা রিকশা দিয়ে না নিয়ে গাড়িতে নেওয়াই ভালো।
এমএসি/এসকেডি