দস্যুরা এখনো কোনো মুক্তিপন চায়নি, সব মিডিয়ার সৃষ্টি
ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ভোর নাগাদ সোমালিয়ার কাছাকাছি নোঙর করেছে। জাহাজ ছিনতাই হওয়ার প্রায় দু-দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত দস্যুরা কোনো মুক্তিপন দাবি করেননি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের সভাপতিত্বে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিকদের উদ্ধারে করণীয় নিয়ে এক আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সচিব খুরশেদ আলম।
তিনি বলেন, আমাদের এই জাহাজটি কিন্তু হাইরিস্ক এরিয়ার (উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সিমানা) ভেতর দিয়ে যায়নি। তারপরও তারা (জলদস্যু) অপেক্ষায় ছিল। হয়ত তারা কোনো জাহাজ পায়নি। সেজন্য এটা হাইজ্যাক করেছে। তারা জাহাজটি দখলে নেওয়ার পর সোমালিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। আজকে ভোর নাগাদ সোমালিয়ার কাছাকাছি তারা জাহাজটি নোঙর করেছে।
আরও পড়ুন
জাহাজ ছিনতাই করা দস্যুরা এখনো বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানান সচিব খুরশেদ আলম।
তিনি বলেন, মুক্তিপণের যে বিষয়টি বলা হচ্ছে, এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। আমাদের কাছে এখনো কোনো মুক্তিপণ তারা(দস্যুরা) চায়নি। মুক্তিপণের ব্যাপারে কোনো যোগাযোগও তারা করেনি।
তিনি আরও বলেন, এখনো জানি না তাদের কি দাবি-দাওয়া। আমরা যদি জানতে পারি তখন হয়ত এটা কৌশলগতভাবে আপনাদের (মিডিয়া) পুরোপুরি জানাতে পারব না। গণমাধ্যমে এ ধরনের প্রতিবেদন আসলে তারা ওখানে দেখবে। যখন তারা দেখবে সরকার চাপের মধ্যে আছে তখন তারা কিন্তু তাদের ডিমান্ড বাড়িয়ে দেবে।
খুরশেদ আলম বলেন, আমরা চেষ্টায় আছি। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কথা বলেছেন। আমাদের ডিজি শিপিং আমাদের সঙ্গে আছেন। জাহাজের যে মালিক তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। মোটামুটি সব পক্ষের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।
নাবিকদের নিরাপদে ফেরানো প্রসঙ্গে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব বলেন, অলরেডি প্রসেস শুরু হয়ে গেছে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য নাবিক ২৩ জন এবং জাহাজ মালামালসহ দেশে ফেরত আনা। সেই লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হবো না। হয়ত তাড়াতাড়ি একটা সুসংবাদ দিতে পারব।
পূর্বে বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা তুলে ধরেন মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা আছে। জাহানমণি নামের একটি জাহাজ ২০১০ সালে এমন ঘটনার মুখে পড়েছিল। ১০০ দিনের মাথায় জাহাজটি আমরা ফেরত আনতে পেরেছিলাম। এরপর আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল, মালয়েশিয়ান জাহাজ আলবেদো। সেখানে আমাদের সাতজন বাংলাদেশি নাবিক ছিল।
খুরশেদ আলম বলেন, আপনারা যদি দেখেন— জাহানমণি আনতে একশ দিন লেগেছে। আর মালয়েশিয়ান জাহাজ থেকে সাতজন নাবিকেকে আনতে লেগেছে তিন বছর চার মাস। কাজেই সময় একটা ব্যাপার। খুব একটা সেনশেনাল নিউজ হবে সেটা আশা করা ঠিক হবে না।
নাবিক এবং জাহাজ উদ্ধারে সরকার কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে— জানতে চাইলে খুরশেদ আলম বলেন, নেগোসিয়েশন চলছে। বাকি যারা এজেন্সি আছে; যেমন-পিএনআই ক্লাব, তাদের সঙ্গে তো আমাদের কথা বলতে হবে। নইলে তারা টাকা দেবে কেন? তারা নেগোসিয়েশন করবে কেন? অন্য জাহাজ ওখানে আছে। কুয়ালালামপুর পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টার আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে। ওমানে একটি অফিস আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। রিক্যাব সিঙ্গাপুরে কথা বলতে হচ্ছে। সোমালিয়ান পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টার আছে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি।
ছিনতাই করা দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমরা কীভাবে যোগাযোগ করব? তারা (দস্যুরা) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তারা যোগাযোগ করেনি। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে, তারা অফিসিয়াল। ওখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাহাজ আছে। ২০ মাইল দূরে আমাদের দুটি জাহাজ আছে। সেই জাহাজের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে।
খুরশেদ আলম বলেন, তিনশ থেকে চারশ জাহাজ ২০০১ সাল থেকে পাইরেসি হয়েছে। বড় বড় দেশের জাহাজেও হয়েছে। সবাই যে পথ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জাহাজ ছাড়িয়ে এনেছে, আমরাও ক্রুদের অক্ষত রেখে জানমালের যেন ক্ষতি না হয় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখব।
জাহাজটির বিমা করা আছে জানিয়ে সচিব বলেন, জাহাজের বিমা করা ছিল। এটাকে পিএনআই ক্লাব বলে। প্রোটেকশন ইনডিমেনিটি ক্লাব। এখানে বিমা করা আছে এই জাহাজের।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন।
এনআই/এমজে