সনদহীন টেকনিশিয়ান, অনুমোদন ছাড়া চার হাসপাতালের ওটি ছিল ময়লাযুক্ত
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সোমবার (১১ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর খিলগাঁও ও মুগদা এলাকায় বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৩।
নানা অসংগতি ও অবৈধ কার্যক্রমের কারণে র্যাব-৩ এর দল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চার প্রতিষ্ঠানকে ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার মো. শামীম হোসেন জানান, র্যাব-৩ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার মাধ্যমে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ও ভুল চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে নানাভাবে রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নানা দুর্ভোগে ফেলছে। সাধারণত রাজধানীর বিভিন্ন নামকরা সরকারি হাসপাতালের দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা এসব হাসপাতালে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এসে প্রতারিত হয়। এসব অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত না হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিম্নমানের অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করে অদক্ষ চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, নার্স ও আয়াদের দ্বারা ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের নানা ধরনের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়। এসব হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং নমুনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে সংরক্ষিত হয় যাতে এর কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এক্সরে মেশিন এমন জায়গায় রাখা হয় যেখানে ন্যূনতম সুরক্ষা-ব্যবস্থা নেই। এতে এক্সরে করতে আসা রোগী, যিনি এক্সরে করাচ্ছেন তিনি এবং আশপাশের মানুষ ভয়াবহ রেডিয়েশনের শিকার হচ্ছেন। রি-এজেন্ট অর্থাৎ কেমিক্যালের পাশে রাখা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় জিনিস। অনুমোদনবিহীন এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অধিকাংশ চিকিৎসকই অদক্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়াও ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স ও অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। অর্থাৎ চিকিৎসার নামে মরণ ব্যবস্থা চালু করে রেখেছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি দল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ‘সীমান্তিক ক্লিনিক’ এর মালিক মো. সামসুদ্দীনকে (৬২) ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান মাহবুব আলম (৫২) এর কোনো প্রকার শিক্ষাগত সনদ না থাকায় ৭ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ক্লিনিকে পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ওষুধ রাখার স্টোর নোংরা, ওটি ও এক্সরে রুম অস্বাস্থ্যকর হওয়া, ডিউটি ডাক্তার ১৫ জনের স্থলে ১০ জন থাকা, নার্স ৩০ জনের স্থলে ১২ জন থাকা, ফায়ার লাইসেন্স না থাকা প্রভৃতি অনিয়ম।
একই সময়ে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ‘পিপলস্ হসপিটাল’র মালিক মনোয়ারুল হক (৩৫) কে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই হসপিটালে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের লাইসেন্স এর মেয়াদ না থাকা, ব্লাড ব্যাংক এর লাইসেন্স না থাকা, পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ওটি ও এক্সরে রুম অস্বাস্থ্যকর হওয়া, অপ্রতুল ডাক্তার ও নার্স থাকাসহ নানা অসঙ্গতি পান ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অন্যদিকে রাজধানীর মুগদা এলাকায় বিকেল ৪টায় অভিযান পরিচালনা করে ‘ফ্রেন্ডস কেয়ার হাসপাতালে’ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে হাসপাতালের মালিক শফিকুর রহমান এবং সাকুর আহমেদকে ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ওটি ও এক্সরে রুম ময়লাযুক্ত দেখতে পান ভ্রাম্যমাণ আদালত।
একই সময় রাজধানীর মুগদা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ‘সুরাইয়া হাসপাতালে’ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে হাসপাতালের মালিক সিরাজুল ইসলাম এর কাছ থেকে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেইউ/জেডএস