মায়ের করা মিথ্যা মামলায় নওমুসলিম স্বামীর জেল হয়েছে দাবি স্ত্রীর
সনাতন ধর্ম থেকে মুসলিম ধর্মে রূপান্তর হয়ে বিয়ে করায় শাশুড়ির মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছেন মো. ইব্রাহিম ওমর নামে একজন নওমুসলিম। তাই নওমুসলিম স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তি দাবি জানিয়েছেন তারই স্ত্রী নওমুসলিম জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর নামে মিথ্যা অপহরণের মামলা দিয়েছে আমার মা। ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য এবং মো. ইব্রাহিম ওমরকে বিয়ে করার জন্য আমাকে কেউ জোর করেনি, ভয় দেখায়নি, ধমক দেয়নি কিংবা টাকা পয়সার লোভও দেখায়নি- সুতরাং এখানে অপহরণ করার প্রশ্নই আসে না।
বুধবার (৬ মার্চ) বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ তিনি এ দাবি জানান।
আরও পড়ুন
জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে গত বছরের ২ নভেম্বর স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে 'ইসলাম' ধর্ম গ্রহণ করি। আমি প্রাপ্ত বয়স্কা এবং সাবালিকা বিধায় আমার আইনত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্ণ জ্ঞান এবং অধিকার রয়েছে। 'ইসলাম' ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে আমি বিজ্ঞ প্রথম শ্রেণির চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা থেকে 'সনাতনা থেকে 'ইসলাম' ধর্মে পরিবর্তন সংক্রান্ত 'হলফনামা সম্পন্ন করি। আমার স্বামীও প্রায় আড়াই বছর পূর্বে 'সনাতন' ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। গত বছরের ৫ নভেম্বর ইসলাম পালনের সুবিধার্থে এবং মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।
তিনি বলেন, আমার মা-বাবা এবং আত্মীয়-স্বজন জানতে পেরে তারা আমার সংসার ভাঙার পায়তারা শুরু করেন। আমাকে জোরপূর্বক পূর্বের ধর্ম গ্রহণ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন এবং আমার স্বামীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। যা এখনো অব্যাহত আছে।
নওমুসলিম জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, আমার মা বাদী হয়ে গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু দমন আইনে আমাকে অপহরণ করা হয়েছে এই অজুহাতে ইব্রাহিম ওমরের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আমার মা দাবি করে, আমাকে নাকি ফুসলিয়ে অপহরণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা ও অবান্তর। 'ইসলাম' ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য এবং মো. ইব্রাহিম ওমরকে বিয়ে করার জন্য আমাকে কেউ জোর করেনি, ভয় দেখায়নি, ধমক দেয়নি কিংবা টাকা পয়সার লোভও দেখায়নি- সুতরাং এখানে অপহরণ করার তো প্রশ্ন-ই আসে না।
জান্নাতুল ইসলাম বলেন, আমার স্বামী মো. ইব্রাহিম ওমরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা এবং সাজানো। আমার নির্দোষ স্বামীর জামিন মঞ্জুর এবং এই মামলাটি মিথ্যা বিবেচনা করে খারিজ করে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র ও আদালতের কাছে জোর আবেদন জানাচ্ছি। বিজ্ঞ আদালতে আমার দেওয়া ২২ ধারা জবানবন্দিতে বলেছি এবং এখনও বলছি, আমি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছি। স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমি স্বামীর কাছে থাকতে চাই, মা-বাবার কাছে যেতে চাই না।
জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, চট্টগ্রাম আদালত আমার ২২ ধারা জবানবন্দি বিবেচনা করে, আমাকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনে আমার পরিবার-পরিজনসহ কিছু উগ্রবাদী, চরমপন্থীদের মদদ-পুষ্টরা হট্টগোল শুরু করে এবং উসকানিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাকে জোরপূর্বক অপহরণের চেষ্টা করা হয়। পরে প্রশাসন এবং আইনজীবীর সহায়তায় আমি নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছাই। আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, এই উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী এবং তাদের মদদ-দাতাদের চিহ্নিত করে, আইনের আওতায় নিয়ে আসাটা সময়ের দাবি। এরা এই দেশ এবং দেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। এরা ব্যক্তিগত ইস্যুকে উসকানি দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, রাষ্ট্রের সকল ধর্মান্তরিত মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব। কিন্তু ৯৫ ভাগ মুসলিম দেশে কেন আমাদের নিরাপত্তা নেই? নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই সরকারের কাছে আমার স্বামী ইব্রাহিম ও আমাদের জীবনের নিরাপত্তার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইব্রাহিম ওমরের ভাই মুহম্মদ আল আমীন, ভাগিনা আশিকুর রহমান প্রমুখ৷
/এমএইচএন/এমএসএ