বার্গার এক্সপ্রেসের ৬ ফুটের কিচেনে ৮ শেফ!
বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির পর বিভিন্ন সংস্থার টনক নড়েছে, নেমেছে অভিযানেও। এমনই এক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে রাজধানীর ওয়ারীতে। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৬ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। জব্দ করেছে বেশ কয়েকটি গ্যাসের সিলিন্ডার।
সোমবার রাজধানীর র্যাংকিন স্ট্রিটের রেস্টুরেন্টগুলোতে এই অভিযান পরিচালনা করেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইকবাল হোসাইন।
বেইলি রোডে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও ওয়ারীর রেস্টুরেন্ট মালিকদের খুব একটা টনক নড়েনি। সেখানে অভিযানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায়, ছোট ছোট জায়গার মধ্যে কিচেন দিয়ে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন তারা। যেখানে কর্মচারী এবং গেস্টদের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। চার ফুট বাই ছয় ফুট সাইজের একটি কিচেনেও ৭-৮ জন শেফ একসঙ্গে কাজ করতে দেখা গেছে। কোনো সেফটি নেই তাদের জন্য। দুর্ঘটনা ঘটলে শেফদের বের হওয়ার মতো কোনো অবস্থাই নেই।
আই লাভ মেজ্জানে গিয়ে দেখা যায়, আগেই সবকিছু সরিয়ে রেখেছেন কর্মীরা। তাই কয়েকটি হাঁড়িপাতিল ছাড়া আর কিছু দেখা যায়নি। তবে ওই ভবনের এক্সিট গেটে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হয়েছে।
বার্গার এক্সপ্রেসে গিয়ে দেখা যায়, চার ফুট বাই ছয় ফুট সাইজের কিচেনে ৭-৮ জন শেফ কাজ করছেন। সেখানে ছোট একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রয়েছে। তবে সেটি দেখে অনেক পুরাতন মনে হয়েছে। কিচেনে যাওয়ার পথে ছিল প্রতিবন্ধকতা।
শেফ টায়েফের এক্সিট পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে রিয়েলমি নামে একটি মোবাইল কোম্পানির শোরুম। এই ভবনের সিঁড়ি দেড় মিটারের বেশি হবে না।
অপরদিকে টিউন অ্যান্ড বাইটের কর্মীরা অভিযানের খবরে পুরো দোকান বন্ধ করে রেখেছিলেন। পুলিশ ভেতরে ঢুকে বুঝতে পারে মিনিট দশেক আগেও এটি খোলা ছিল। রেস্টুরেন্টের ২/১টি টেবিলে খাবারও রাখা ছিল। কিচেনে গিয়ে কোনো সিলিন্ডার পাওয়া যায়নি। তবে কিচেনে ব্যাপক তাপ ছিল। পরে জানা গেল— কিছু সময় আগই তারা সিলিন্ডার সরিয়ে ফেলেছেন।
ডাইনিং লাউঞ্জের কিচেনে একাধিক অ্যাক্টিভ সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। অভিযান পরিচালনা করা বাকি রেস্টুরেন্টগুলোরও একই অবস্থা।
আরও পড়ুন
স্থানীয় বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই এলাকায় দীর্ঘসময় ধরে থাকি। এটি আবাসিক এলাকা ছিল। ধীরে ধীরে কীভাবে যেন চোখের সামনে বাণিজ্য এলাকায় পরিণত হয়েছে। এখন প্রতিটি বাড়ির নিচতলায় দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় এখন সবসময় জ্যাম লেগে থাকে। আগে খুব স্বাভাবিকভাবেই এলাকার প্রতিটি গলিতে চলাচল করা যেত। এখন আর সেটি সম্ভব নয়। বাড়িওয়ালারা অতি মুনাফার লোভে ওয়ারীকে বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত করেছে।
অভিযান শেষে ডিসি মো. ইকবাল হোসাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গতকাল থেকে অভিযানে নেমেছি। বিশেষ করে আমাদের ওয়ারী থানার অধীনে র্যাংকিং স্ট্রিট অনেক ব্যস্ততম একটি জায়গা। এই একটি রাস্তায় মোর দ্যান ফিফটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই রেস্টুরেন্টগুলো আমরা ভিজিট করেছি।
তিনি বলেন, ভিজিট করতে গিয়ে আমরা যা পেয়েছি তা হলো— বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট আবাসিক ভবনের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে তারা এই রান্নার কাজগুলো চালাচ্ছে। আমরা ভিজিট করে দেখেছি— সেফটি কোড, কিচেন কোড কোনোকিছুই তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। এও দেখেছি— কিচেন ৪ ফুট বাই ৬ ফুট জায়গার মধ্যে করা হয়েছে। এমন জায়গার মধ্যে সাত থেকে আটজন শেফ একসঙ্গে রান্না করছেন। যেই দরজা খুলে কিচেন থেকে বের হবে সেই দরজার সামনে চালের বস্তা, আটার বস্তা রাখা হয়েছে। এছাড়া একই পাশে বিভিন্ন সিলিন্ডার, জেনারেটর রাখা হয়েছে। মূলত চরম অনিরাপদ অবস্থায় তারা রেস্টুরেন্টগুলো পরিচালনা করছেন।
এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে ডেপুটি কমিশনার বলেন, মিনিমাম সেফটি যারা মেইনটেইন করতে পারেনি এমন রেস্টুরেন্ট থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএইচএন/এমজে