ব্যাজ লাগিয়ে জোর করে নেওয়া হচ্ছে টাকা, বিব্রত পাঠক-দর্শনার্থী
হকার, ভাসমান ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর জন্য বইমেলার পরিসর বাড়ানো হলেও সুফল পাচ্ছেন না পাঠক-দর্শনার্থীরা। এবার মেলার ভেতরেই শুরু হয়েছে অন্যরকম চাঁদাবাজি। জোর করে মেলায় আসা মানুষকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাজ। হাতে এঁকে দেওয়া হচ্ছে ছবি। আর এসবের বিনিময়ে সম্মানীর নামে নেওয়া হচ্ছে টাকা। কেউ দিতে না চাইলে নাছোড়বান্দার মতো ঘিরে ধরে নানান ভাবে অপমান-অপদস্থ করা হচ্ছে। লোক লজ্জায় মানুষজনও কথা না বাড়িয়ে যত টাকা পারছেন তা দিয়ে কেটে পড়ছেন।
আবার কেউ প্রতিবাদ করলেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের শক্ত জেরার কিংবা আক্রমণের। আর এসব কার্যক্রম চলছে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে! বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার কালী মন্দির সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটে প্রবেশ পথে এবং ভেতরের দিকে প্রায় ৮-১০টি জায়গায় সঙ্গবদ্ধ চক্রের এমন কার্যক্রম চোখে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বইমেলায় গেট দিয়ে পাঠক-দর্শনার্থীরা প্রবেশ করলেই কয়েকজন ঘিরে ধরেছেন। আর তাদের হাতে থাকা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং অমর একুশে বইমেলা লেখা বিভিন্ন ছোট মেটাল ব্যাজ জোর করে লাগিয়ে দিচ্ছেন। আবার কারো হাতে রয়েছে ছোট মার্কার প্যান। সেটি দিয়ে হাতের মধ্যে এঁকে দিচ্ছেন ছোট করে যে কোন একটি চিত্রকর্ম। এরপরই শুরু হচ্ছে দরকষাকষি। ব্যাজ লাগিয়ে দেওয়া কিংবা এঁকে দেওয়া চিত্রকর্মের বিনিময়ে চাওয়া হচ্ছে সম্মানী। তবে সেটি আবার ১০-২০ টাকায় চলবে না। হতে হবে ৫০-১০০ টাকা। কিংবা কারো কাছ থেকে এর বেশিও নিতে দেখা গেছে।
দীর্ঘ সময় তাদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা টার্গেট করছে মেলায় আসা নারী ও প্রবীণদের। আবার যুগল পেলেও তাদের ঘিরে ধরা হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের। চাহিদা মাফিক টাকা না দিলে সেই ব্যাজ আবার টান দিয়ে খুলে নেওয়া হচ্ছে। করা হচ্ছে বিরূপ মন্তব্য। এসব কার্যক্রম করছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। তারা কাউকে ছবি তুলতে দেখলে কিংবা কেউ প্রতিবাদ করলে তার দিকে তেড়ে আসছেন।
ছবি তোলার কারণে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকও মুখোমুখি হয়েছেন তাদের তোপের। মেলার মাঠে বেশ কয়েকজনকে জোরপূর্বক ব্যাজ লাগিয়ে টাকা নিচ্ছেন এমন ছবি তুলতে গেলে প্রতিবেদকের দিকে তেড়ে আসেন মাহমুদ রাজন নামে ওই চক্রের এক সদস্য। তোলা ছবিটি ডিলিট করার জন্য অনেকক্ষণ উচ্চবাচ্য করেন তিনি। এ সময় বইমেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশদের সহায়তার জন্য ডাকা হলে দ্রুত তারা সটকে পড়েন।
পরে কন্ট্রোল রুমের পুলিশ সদস্যরা কালী মন্দির গেটের কাছে গেলে একজনকে হাতেনাতে ধরতেও সক্ষম হন। বাকি প্রায় ৪-৫টি গ্রুপের সদস্যরা দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করেন।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মেলায় আসা মানুষজন। শামীম আহমেদ নামে একজন বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় এসেছি। শুরুতেই তারা গেটে হাতে ছবি এঁকে এবং ব্যাজ লাগিয়ে দিয়েছে। পরে টাকার জন্য ঝামেলা করেছে। ১০০ টাকা দিয়ে সেখান থেকে এসেছি। মানুষের সামনে লোক লজ্জায় বেশি কিছু বলতেও পারিনি। এরা হচ্ছে স্মার্ট ভিক্ষুক।
টাকা না দেওয়ায় এক বৃদ্ধের শার্ট থেকে অপমানজনক কথা বলে ব্যাজ খুলে নিয়ে যেতে দেখা যায় রফিক নামে ওই চক্রের আরেক সদস্যকে। ওই বৃদ্ধ বলেন, আমি এই ব্যাজ দিয়ে কী করব? আমাকে টাকা দিতে বলেছে। আমি ১০ টাকা দিয়েছি। তারা নেয় না। এর বেশি চায়, যার সামর্থ্য আমার নেই। পরে আবার সেটি খুলে নিয়েছে। এগুলো কি দেখার কেউ নেই?
বিষয়টি নিয়ে অমর একুশে বইমেলার সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমি এখনই লোক পাঠাচ্ছি। আমার কাছে কিছু ছবি এবং ভিডিও পাঠিয়ে দিন। বিষয়টি আমি দেখছি।
তবে পরবর্তী সময়ে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন সেটি আর যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আরএইচটি/এসকেডি