শবে বরাতে পুরান ঢাকায় হালুয়া-রুটি বিক্রির ধুম
আজ পবিত্র শবে বরাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকিরসহ এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত কাটাবেন। এর বাইরেও শবে বরাতকে কেন্দ্র করে রয়েছে বেশকিছু সামাজিক রীতিনীতির প্রচলন। যদিও বহুদিন ধরে চলা এসব রীতিনীতির পক্ষে নেই কোনো ধর্মীয় নির্দেশনা।
শবে বরাতে হালুয়া-রুটি খাওয়া কিংবা প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করার বিষয়টি চলে আসছে বহু বছর ধরে। সে ধারাবাহিকতায় এবছরও লাইলাতুল বরাতকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় ধুম পড়েছে হালুয়া-রুটি বিক্রির।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারী, রায়সাহেব বাজার, লালবাগ এবং চকবাজার এলাকার অলিগলি ও মহল্লা ঘুরে হরেক রকমের হালুয়া-রুটির পসরা দেখা যায়।
পুরান ঢাকার বাসিন্দারা বলেছেন, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে হালুয়া-রুটি খাওয়ার ধর্মীয় কোনো নির্দেশনা না থাকলেও এটি বহু বছর ধরে প্রচলিত প্রথা হিসেবে চলে আসছে। এ দিনকে কেন্দ্র করে সবার মধ্যে একটি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। সবার এমন উৎফুল্লতায় একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। তাছাড়া এই দিনে আত্মীয় ও পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতেও পাঠানো হয় হালুয়া-রুটি। এমন কার্যক্রম পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করতে এবং বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে ভূমিকা পালক করে বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
ভোজনরসিক পুরান ঢাকার মানুষজন স্বাভাবিক হালুয়া-রুটির আয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকেন না। স্থান পায় বাহারি নাম আর স্বাদের বিভিন্ন রুটি, হালুয়া, পায়েস আর মিষ্টি। চকবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানি হালুয়া, মাস্কাট হালুয়া, মাখাদি হালুয়া, সুজির হালুয়া, গাজরের হালুয়া ও নকশি, ফেন্সি রুটির পসরা সাজিয়েছেন। এসব দোকানকে কেন্দ্র করে মানুষের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। ফেন্সি ও নকশি নামের এসব রুটি ১০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ১৫-১৬ কেজি ওজনেরও রয়েছে। আর রুটিতেও দেখা গেছে নানা নকশা। এসব এলাকায় মাছের বরা, জিলাপি, ঠান্ডা দই, মতিচুর লাড্ডু, মাওয়া লাড্ডু এবং রসমালাইও সমানতালে বিক্রি হচ্ছে।
চকবাজারের হাজী বেকারির ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বলেন, আগের থেকে বেচাবিক্রি একটু কম। ফেন্সি রুটিটা বেশি চলছে, ২৫০ টাকা কেজি রাখছি। একেবারে গরম রুটি নিয়ে এসেছি। দুপুরের পর থেকে মানুষজন আসছে। দেখেশুনে কেনাকাটা করছে, আমরাও আনন্দ পাচ্ছি। আমার এখানে বুটের হালুয়া ২৫০ টাকা আর গাজর ও সুজির হালুয়া ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আব্দুল হাকিম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ঢাকাসহ দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এখানে বিভিন্ন রুটি ও হালুয়া কিনতে আসেন। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার-হাজার টাকা দামের হালুয়া রুটি রয়েছে। মানভেদে একেক হালুয়ার দাম একেক রকম। বুট গাজরের হালুয়া দোকানভেদে ৫-৭শ টাকা এবং পেস্তা বাদাম, নেশেস্তাহ হালুয়া ৮-১২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর রুটির মধ্যে বেশি চলছে ফেন্সি রুটি। এসব রুটি আকার ও মানভেদে কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরএইচটি/এসএসএইচ