ভাসানচর বিতর্কের সমাধান হয়ে গেছে : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
সম্প্রতি নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় প্রকাশিত নেতিবাচক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘ভাসানচর ইস্যুটি এখন আর কোনো ইস্যু নয়, এটার সমাধান হয়ে গেছে।’
বুধবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজনে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা : প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভাসানচর ইস্যুটি এখন আর কোনো ইস্যু নয়, এটার সমাধান হয়ে গেছে। ভাসানচর ইস্যুটি এখন ‘ডান অ্যান্ড ডাস্টেড’। অতীতেও আমরা বলেছি, আমরাই প্রথম দরজা খুলে দিয়েছি; আমরা জানি কীভাবে অন্য দেশ থেকে বিতাড়িত মানুষদের মানবিক বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়ে দেখভাল করতে হয়। আমরা সেটাই করেছি।
সম্প্রতি প্রচারিত এক প্রতিবেদনে আল জাজিরা দাবি করে, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক করেছে যে, ঝড় বৃষ্টির মৌসুম আসন্ন। এ পরিস্থিতিতে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তীব্র ঝড়ের কবলে পড়তে পারে এবং সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা আমাদের রিসোর্স দিয়ে রোহিঙ্গাদের মতামতের ভিত্তিতেই ভাসানচরে নিয়েছি। আন্তর্জাতিক বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা সম্প্রতি ভাসানচর সফর করেছেন। তখন তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেননি। এমনকি কক্সবাজারের মতো ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর সঙ্গে কিছু সুপারিশও করেছে সংস্থাটি।
গত ১৭ মার্চ তিন দিনের সফরে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধা দেখতে সরেজমিন পরিদর্শনে যান জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। ওই সফরে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার কাজে যুক্ত সংস্থাটির কর্মকর্তারা। আর ওই সফর ছিল ভাসানচরে প্রথম জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের সফর।
সেই সফর নিয়ে সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছিলেন, ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় জাতিসংঘ।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দ্বীপটি সফর করে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি প্রতিনিধিদল। সবশেষ চলতি মাসের শুরুর দিকে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা করা হয়েছে তা পরিদর্শন করেন ঢাকায় নিযুক্ত ১০ বিদেশি রাষ্ট্রদূত। ১০ রাষ্ট্রদূতও সফর শেষে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে অধিকতর নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয় করে ভাসানচর প্রস্তুত করে বাংলাদেশ সরকার। বছর দুয়েক আগেও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছিল না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাধার কারণে। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের অনিচ্ছার পরও ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। এ পর্যন্ত সাত দফায় ১৭ হাজার ৯৭১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে।
এনআই/এসকেডি