আইসিটিসহ প্রতি জেলায় ব্যাটালিয়ন চায় আনসার
স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জাতি গঠনের স্লোগানকে ধারণ করে স্মার্ট আনসার গঠনে কেন্দ্রীয় ওয়্যারলেস সিস্টেমের জন্য আইসিটি ব্যাটালিয়নসহ বাহিনীতে দ্বিতীয় গ্রেডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) ও তৃতীয় গ্রেডের উপমহাপরিচালক (ডিডিজি) পদ সৃজনের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। পাশাপাশি দেশের প্রতি জেলায় ‘আনসার ব্যাটালিয়ন’ চায় বাহিনীটি।
এর আগে জেলাতে আনসারের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা (পরিচালক) এবং সহকারী পরিচালক (এডি) পদ সৃজনের দাবি জানানো হয়েছিল। সেটি এখনো ঝুলে আছে। সেটিসহ এবার বাহিনীর আবাসন ও যানবাহনের সমস্যাকেও তুলে ধরা হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দরবার অনুষ্ঠানে।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৪তম জাতীয় সমাবেশ আজ (১২ ফেব্রুয়ারি)। উৎসাহ-উদ্দীপনা আর নানান আয়োজনে গাজীপুর সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে দিবসটি উদযাপনে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সালাম গ্রহণ ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাহিনীর পক্ষ থেকে একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রতি জেলার জন্য আনসার ব্যাটালিয়ন গঠন, এডিজি ও ডিডিজি পদ সৃজনসহ দুটি নারী ব্যাটালিয়ন ও একটি গার্ড ব্যাটালিয়ন চায়। এছাড়া খিলগাঁও আনসার সদরদপ্তর ও গাজীপুর আনসার অ্যাকাডেমির জন্য পৃথক সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন চায়। সার্কেল অ্যাডজুট্যান্টদের ৯ম গ্রেড ও উপজেলা প্রশিক্ষক পদ ১২তম গ্রেডে উন্নতি করা এবং ৬০০ হিল আনসার ও ৪৩৯জন বিশেষ আনসার সদস্যের চাকরি স্থায়ীকরণ করার দাবিও থাকছে। এছাড়া পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টিও ওঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
বর্তমানে ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন ও একটি আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন রয়েছে। তবে এখনও ৪১টি জেলায় কোনো আনসার ব্যাটালিয়ন নেই। আবার অনেক জেলায় একাধিক ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন করছে। সবচেয়ে বেশি আনসার ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন করছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯টি। আর ময়মনসিংহে কোনো ব্যাটালিয়ন নেই। এছাড়া রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে একটি করে। কুমিল্লা ২টি, রংপুর ৩টি, খুলনা ৪টি ও ঢাকা ৯টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মহিলা ও একটি গার্ড ব্যাটালিয়ন রয়েছে।
আনসারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সবচেয়ে বড় বাহিনী। এখন সময়ের প্রয়োজনে উচিত আনসার বাহিনীকে স্মার্ট করে গড়ে তোলা। অথচ আনসারের কেন্দ্রীয় কোনো ওয়্যারলেস সিস্টেম নেই। ব্যাটালিয়নভিত্তিক থাকলেও সেটা সীমাবদ্ধ। এ নিয়ে কোনো ব্যাটালিয়ন জরুরি পরিস্থিতিতে পড়লে, তাদের উদ্ধারের সহযোগিতা চাওয়ার জন্য মোবাইল নেটওয়ার্কই ভরসা, অন্য কোনো ব্যাটালিয়নের সঙ্গে ওয়্যারলেস সিস্টেমে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাই।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য এলাকায় অনেক স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্কই কাজ করে না। পার্বত্য জেলাতে অন্য বাহিনীর ওয়্যারলেস সিস্টেম ব্যবহার করে কার্যক্রম চালাতে হয় ব্যাটালিয়ন-আনসারকে। অন্য যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই সিস্টেমসহ বাহিনীতে একটি আইসিটি ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হবে।
আনসারদের দাবি, জেলা পর্যায়ে একটি পঞ্চম গ্রেডের (৬৪টি পরিচালক পদ) কর্মকর্তা পদ ও ১৬৪টি সহকারী পরিচালক পদ সৃজন করা। গত সমাবেশে এই দাবির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেটি বাস্তবায়ন হলে, পুলিশের আদলে পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা আনসারেও দেওয়া হবে। এসব কর্মকর্তার পদবি হবেন পরিচালক। তার অধীনে একজন উপপরিচালক (ডিডি)। আর তিনজন সহকারী পরিচালক (এডি) থাকবেন।
বর্তমানে জেলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে একজন ডিডি ও একজন এডি দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু ঢাকা জেলায় একজন ডিডির পরে দুজন এডি দায়িত্ব পালন করেন।
এ বিষয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক বলেন, ‘প্রত্যাশা অনেক। বাহিনী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সবই জানা। প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি একে একে সব দিয়ে যাচ্ছেন। সমাবেশের কয়েকটি সেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তখন দাবি-দাওয়াগুলো জানাবো।
জেইউ/এসএম