ঢাকায় বসেছে নিরাপদ পিঠার হাট
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) চলছে সেফ ফুড কার্নিভাল। তিন দিনব্যাপী এ মেলার শেষ দিনে বসেছে নিরাপদ পিঠার হাট।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফুলঝুড়ি, দুধপুলি, সেমাই পিঠা, বিবিখানা, নারিকেল পুলি, ক্ষীর সেমাই, চিকেন বিং, ঝাল চিংড়ি পিঠা, শাহী ভাঁপা, ডিম সুন্দরী, ডাল সুন্দরী, পাটিসাপটা, তেলে ভাজা, ডিমের পানতোয়া, ধুপাই, নকশী, জামাই, গোলাপ, মাংস পুলি, চুই পিঠা, মালাই পিঠা, নোনতা ভাঁপা পিঠা, চুষি পিঠাসহ নাম না জানা অসংখ্য পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন উদ্যোক্তারা।
ঘুরে দেখা যায়, উৎসবে অংশ নেওয়াদের মধ্যে কেউ উপস্থাপন করছেন গোপালগঞ্জের তক্তিকে, কেউ নিয়ে এসেছেন টাঙ্গাইলের পিঠা, কেউ আবার উপস্থাপন করছেন নোয়াখালীর খোলা জালি পিঠা, কেউ কেউ আবার নিজের এলাকা ছাড়িয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন ভিন্ন কোনো এলাকাকেও। সাভারের চুষি পিঠা কিংবা গাজীপুরের চুই পিঠাসহ অন্তত ৪০ প্রকারের পিঠা নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করেছেন অর্ধ শতাধিক উদ্যোক্তা।
আয়োজকরা বলছেন, বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। পিঠা-পায়েস সাধারণত শীতকালের রসনা জাতীয় খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত এবং মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বাঙালি সমাজে আদরণীয়। আত্মীয়স্বজন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠাপুলির উৎসব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আয়োজিত সেফ ফুড কার্নিভালের তৃতীয় দিনে আয়োজিত হয় পিঠা প্রতিযোগিতারও। পিঠা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন মেরিনা সুলতানা, দ্বিতীয় হয়েছেন শারমিনা জেসমিন তুলি ও তৃতীয় হয়েছেন নুসরাত জাহান।
সেফ ফুড কার্নিভাল আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিএফএসএ সচিব আব্দুন নাসের খান বলেন, পিঠা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য। যথাযথ খাদ্যের নিরাপত্তা মেনে এ ঐতিহ্যকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই মূলত আমাদের এ আয়োজন। অংশগ্রহণকারীরা যেভাবে নিরাপত্তা মেনে পিঠা প্রস্তুত ও পরিবেশন করছেন, দেখে ভালো লেগেছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ আয়োজনে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন, রন্ধনশিল্পী ও লেখক হাসিনা আনছার এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক রেবেকা খান।
কামাল হোসেন বলেন, এ আয়োজন আমাদের শেকড়কে মনে করিয়ে দিচ্ছে। নিরাপত্তার মাপকাঠিগুলো মেনে যদি পিঠা প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়, তাহলে আমাদের ঐতিহ্য আরও টেকসই থাকবে।
হাসিনা আনছার বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এমন আয়োজন পিঠা প্রস্তুতকারকদের মধ্যে আরও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
মেলায় আসা দর্শনার্থীরা জানালেন উচ্ছ্বাসের কথা। সাভার থেকে আসা মাসুদা আক্তার বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এমন আয়োজন আমাদের মতো শত শত উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি করবে। নিরাপত্তা বজায় রেখে পিঠা তৈরি হলে দেশের ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি এ খাতকে আরও সমুন্নত করা যাবে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা তৈয়বা আক্তার বলেন, কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। আমরা চাইব প্রতি বছর যাতে এমন আয়োজন করা হয়। এতে করে দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরএইচটি/এসএসএইচ