আইসিইউর সামনে অপেক্ষা, এই বুঝি এলো খারাপ খবর!
দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দিন পার করা বহু মানুষের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। হাসপাতালগুলোতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে মানুষ। কেউ জিতে ফিরছেন, কেউ হাসপাতাল থেকেই বিদায় নিচ্ছেন, পাড়ি দিচ্ছেন না ফেরার দেশে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাদের অবস্থা গুরুতর হচ্ছে তাদের নিতে হচ্ছে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। কোনো রোগীকে আইসিইউতে নেওয়া মাত্রই সেই পরিবারে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া। বহু কষ্টে আইসিইউতে একটা বেড পাওয়া গেলেও মৃত্যুর সঙ্গে এ লড়াইয়ে শেষ পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই জীবনের কঠিনতম দিনগুলো পার করছেন স্বজনরা।
এমন অসংখ্য মানুষের একজন আমিনা বেগম। তার স্বামী শাহিন মোল্লা শুয়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে। শাহিন-আমিনার ছেলে সম্রাট ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছেন হাসপাতালে।
শাহিন মোল্লাকে হাসপাতালে নিতেই এ পরিবারের মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ে। খুব বিপদের আশঙ্কায় কখনো ছেলে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, মা সান্ত্বনা দিচ্ছেন; আবার কখনো মাকে সাহস দিচ্ছেন ছেলে।
১৭ এপ্রিল তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢামেকের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন শাহিন মোল্লা। গতকাল (সোমবার) তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন অনেক নিচে নেমে আসে। দ্রুত তাকে নেওয়া হয় আইসিইউতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ২০টি। বর্তমানে একটি বেডও ফাঁকা নেই। রোগীদের প্রিয়জনরা আইসিইউর সামনে বসে আছেন পাটি বিছিয়ে- কখন কী প্রয়োজন হয়, রোগীর কখন কী অবস্থা হয়, চিকিৎসক খুঁজলেই যেন পাওয়া যায়..
আমিনা বেগম জেনেছেন তার স্বামীর অবস্থা মোটেও ভালো নয়। যেকোনো সময় তাদের সবচেয়ে খারাপ খবরটা শুনতে হতে পারে। আইসিইউর সামনে বসে থাকা আমিনা বললেন, ‘কী করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ২০টি। বর্তমানে একটি বেডও ফাঁকা নেই। রোগীদের প্রিয়জনরা আইসিইউয়ের সামনে বসে আছেন পাটি বিছিয়ে। কখন কী প্রয়োজন হয়, রোগীর কখন কী অবস্থা হয়, চিকিৎসক খুঁজলেই যেন পাওয়া যায়, সেজন্যই তাদের এ আয়োজন। সবার মনে একটিই চাওয়া, ফিরে আসুক তাদের স্বজন।
পৃথিবীতে নতুন একটি প্রাণ এনে দেওয়ার আশায় গর্ভে সন্তান ধারণ করেছিলেন ফারহানা বেগম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি নিজেই এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ফারহানাও এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন আইসিইউতে। মা রিনা বেগম বলেন, প্রথমে করোনা উপসর্গ নিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি হয় আমার মেয়ে। করোনা পজিটিভ হলে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। আইসিইউতে আছে ১০-১২ দিন হবে।
ফারহানার অবস্থার বিষয়ে রিনা আরও বলেন, হঠাৎ হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে যায়। কী হবে এখনো বলতে পারি না। এখানে কয়েকদিনেই ৮-১০ জন মারা গেছে। শুনেছি বেশির ভাগ ওষুধ এখান থেকে দেয়। কিন্তু আমার তো সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, আইসিইউ যেন সোনার হরিণ। আমার ছেলে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে যায়। তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করি ৭-৮ দিন আগে। ভর্তির পর জানতে পারি তার করোনা পজিটিভ। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনদিন হলো তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। অবস্থা ভালো না, কখন যে কী হয়ে যায়।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ওয়ার্ড মাস্টার মো. বাবুল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে আইসিইউ পাওয়া আসলেই সোনার হরিণ। কারণ, আইসিইউর সংখ্যা ২০টি, রোগীর সংখ্যার হিসাব নেই। যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। যাদের সামর্থ্য নেই, তারা অপেক্ষায় থাকে কখন আইসিইউ ফাঁকা হয়।
এসএএ/এনএফ/জেএস