স্কয়ারেও মিলছে না আইসিইউ
রাজধানীর সোবহানবাগ এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন। তার বড় বোন করোনায় আক্রান্ত হয়ে কাকরাইলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। চিকিৎসক তাকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখানে আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকায় আজ (২০ এপ্রিল) দুপুরে স্কয়ার হাসপাতালে আসেন আকরাম। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানাল, আইসিইউ খালি নেই।
স্কয়ার হাসপাতালের সামনেই ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় আকরাম হোসেনের। তিনি জানান, এখানে আসার আগে আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে বড় বোনকে ভর্তি করানোর জন্য আইসিইউর খোঁজ নেন। কিন্তু সবগুলো হাসপাতাল থেকে তাকে ‘আইসিইউ নেই’ বলে ফেরত পাঠানো হয়।
দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত আসছেন আক্রান্ত রোগীরা। বিভিন্ন সূত্র বলছে, করোনার জন্য নির্ধারিত রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন কোনো ঠাঁই নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য আইসিইউ খুঁজতে আসা কয়েকজন রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য আইসিইউ না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ছুটে এসেছেন তারা।
কবির হোসেন নামে একজন বলেন, ‘আমার এক নিকট আত্মীয় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু ওনার শরীর খারাপের দিকে যাওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। এখন অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে আইসিইউ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছি। স্কয়ারে আইসিইউ খালি নেই। আল্লাহ জানে, কোথায় ভর্তি করাব।’
স্কয়ার হাসপাতালে কোভিড-রোগীদের জন্য আলাদা আইসিইউর ব্যবস্থা রয়েছে। আর অন্যান্য রোগীদের জন্যও রয়েছে আলাদা আইসিইউ ব্যবস্থা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে রোগীদের চাপে আইসিইউ নিয়ে তারাও বিপাকে রয়েছেন। হাসপাতালটির কোভিড আইসিইউ এবং অন্যান্য রোগীদের জন্য যে আইসিইউ ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ।
হাসপাতালটির কোভিড আইসিইউতে থাকা এক রোগীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত তিনদিন ধরে তার মেয়ে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। ওষুধসহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে তাকে।
স্কয়ার হাসপাতালের কাস্টমার ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোথাও আইসিইউ পাওয়া যাচ্ছে না। স্কয়ারে তো আরও কঠিন অবস্থা। বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে আমাদের এখানে রোগীর চাপ বেশি, এখন চাপটা আরও বেশি যাচ্ছে।’
হাসপাতালটিতে কতজন করোনা রোগীর জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা আছে আর এ মুহূর্তে কোনো আইসিইউ ফাঁকা আছে কি না- জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আইসিউতে কয়টা বেড আমার জানা নেই। তবে সবসময় রোগী থাকে। আমাদের এখানে আইসিইউ ফাঁকা থাকে না, সহজে পাওয়া যায় না। কোভিড রোগী পুরোপুরি সুস্থ না হলে তো বের করে দেওয়া যায় না।’
এনআই/এইচকে/জেএস