জরিমানা আতঙ্কে দোকান ফেলে পালালেন চালের আড়ৎদাররা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই দেশে হঠাৎ বেড়ে গেছে চালের দাম। চালের বাজারের লাগাম টেনে ধরতে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। অবশ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালের দামকে অস্বাভাবিক বলার পর দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে বাজার মনিটরিংয়ে যায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বাজার মনিটরিং টিম। এর নেতৃত্ব দেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. জয়নাল আবেদিন।
দুপুর ১২টায় চালের আড়তে শুরু হয় তাদের অভিযান। শুরুতে হাজী এন্টারপ্রাইজ রিমের একটি চালের আড়তে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কাউকে খুঁজে পায়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম। এরপর আরও দুটি আড়তে একই ঘটনা ঘটে। আড়ৎ খোলা, অথচ সেখানে পাওয়া যায়নি কাওকেই। অভিযানের খবরে দোকান খোলা রেখেই পালিয়ে যান আড়ৎদাররা।
চতুর্থ নম্বর আড়তে গিয়ে দেখা মেলে মহাজনের। দিনাজপুর রাইস এজেন্সি নামের এই আড়তে কিছু অনিয়ম পাওয়া যায়। অনিয়মের জন্য আড়ৎদারকে কোনো শাস্তি দেননি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। তিনি পরবর্তী সময়ে আবার আসবেন বলে আড়ৎদার আসাদুজ্জামানকে সতর্ক করেন।
আরও পড়ুন
আড়ৎদার আসাদুজ্জামান জানান, তার চালের মূল্যের তালিকা নবায়ন করা হয়নি। তবে তাকে কোনো জরিমানা করা হয়নি।
দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগ দেন কৃষি মার্কেট চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মন্টু। প্রায় ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় নিয়ে চলা অভিযানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমের সঙ্গে ছিলেন তিনি।
এক ডজনের বেশি আড়ৎদারের কাছে চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চান অভিযান পরিচালনাকারীরা। কমবেশি সব আড়ৎদারের ভাষ্য, জেলা পর্যায়ে মিলাররা হঠাৎ করেই চালের দাম বাড়িয়েছেন। চালের দাম বাড়ার সঙ্গে আড়ৎদারদের আসলে কোনো দায় নেই।
অভিযান পরিচালনাকারীদের সোহেল এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুর রহমান সোহেল বলেন, হঠাৎ করে দেখি চালের দাম বেড়ে গেছে। আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না।
কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য বলছে, মার্কেটটিতে পাইকারি চালের আড়ৎ রয়েছে ১৭০টি।
অভিযান শেষে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. জয়নাল আবদিন। তিনি বলেন, মাঝখানে দাম বেড়ে গিয়েছিল, এখন সেটি কমছে এবং সেটি ভালোই। আমরা আশা করছি... খুব দ্রুত চালের দাম আগের পর্যায়ে চলে আসবে। দোকানদাররা বলেছেন, দাম বাড়ার গতির সঙ্গে কমার গতি সেভাবে হচ্ছে না। তবে কমছে। কিছু জায়গায় আমরা অভিযান চালাচ্ছি। নজরদারিও আছে। আজকের অভিযানে আমরা তেমন কোনো ত্রুটি পাইনি।
অভিযানের খবর পেয়ে আড়ৎদারদের পালিয়ে যাওয়া এবং অনিয়ম পেয়েও শান্তির আওতায় না আনার বিষয়ে উপসচিব বলেন, ব্যবসায়ীরা চলে গেছেন। আমরা আবার আসব। প্রয়োজনে না বলে আসব। আমরা জরিমানা করছি। মূলত জেলা পর্যায়ে যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে, মোকামগুলোতে ব্যাপক অভিযান হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে আমরা জরিমানা করব না, ব্যাপারটা এমন নয়। যদি অনিয়ম পাই, বড় অ্যাকশনে যাব। আসলে আমরা বড় ধরনের কোনো অনিয়ম পাইনি। বিক্রির সঙ্গে ক্রয়ের খুব একটা তফাৎ নেই।
কৃষি মার্কেট চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখানে চাল পাইকারি দরে বিক্রি হয়। চালের দাম কমেছে। ছোট দোকানে দাম কমেছে কি না সেটি বলতে পারব না। তবে নিয়ম তো হচ্ছে, পাইকারিতে দাম কমলে খুচরাতেও দাম কমবে। চালের দাম বাড়ার বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ করে দামটা বেড়ে গেছে। রাতারাতি মিলাররা দু’একদিনের মধ্যে দাম বাড়িয়েছেন।
অভিযানের খবর শুনে আড়ৎদারদের পালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে কৃষি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো কিছুর দাম বাড়লে ভোক্তা অধিকার কিছু বুঝে না বুঝে আমাদের জরিমানা করত। আমরা তাদের বুঝাতাম সমস্যাটা কোথায়, তারপরও তারা বুঝত না। তারা জরিমানা করে, সেজন্য আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক। লোকগুলো কাছাকাছি আছে, পালিয়ে যায়নি। যদি ১০০ টাকা লাভ করে দিনে দুই হাজার বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দেই, সেটি তো মরার ওপর খাঁড়ার গা। আজ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের টিম কিছুটা ত্রুটি পেয়েছে, কিন্তু অতটা না। আসলে একটা ভয় কাজ করে। এই ভয়টা কেটে যাবে।
এনআই/কেএ