জীবিকার তাগিদেই তীব্র শীতেও বরফ টানেন তারা
দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। ঢাকায় তাপমাত্রা নেমেছে ১১ ডিগ্রির ঘরে। মাঘ মাসে এমনিতেই ঠান্ডার তীব্রতা থাকে খানিকটা বেশি। তার ওপর শৈত্যপ্রবাহ, নিম্নমুখী তাপমাত্রা, কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার পুরোপুরি জবুথবু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চলের মানুষজন। এমন অবস্থায় অধিকাংশ মানুষজনই ঘরে কিংবা উষ্ণতার মধ্যে থেকে যথাসম্ভব বাইরের ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। তবে শীত, ঠান্ডা কিংবা কুয়াশা সবকিছুই হার মানে কর্মজীবী, শ্রমজীবী এবং নিম্নআয়ের মানুষের কাছে। জীবিকার তাগিদে সব ধরনের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে এসব মানুষেরা টানেন বরফ, চালান রিকশা অথবা অপেক্ষা করেন দিনমজুর হিসেবে চুক্তিভিত্তিক কোনো কাজের।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এমনই কিছু মানুষজনের দেখা পাওয়া যায়।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজার সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে মাছের পাইকারি বাজারে পাশের বরফ কল থেকে মাথায় তুলে বরফ নিয়ে আসছেন কয়েকজন দিনমজুর। জানালেন, এটাই তাদের পেশা। রোদ, বৃষ্টি, গরম, ঠান্ডা, শীত- সবসময় তারা মাছের বাজারে বরফ টানেন। এভাবেই জোগাড় হয় জীবনযাপনের খবর। তবে তারা বললেন, এ বছরের শীতে অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। কারণ এই পাইকারি হাট বসে শেষরাত থেকে। মধ্যরাতের পর থেকেই সারা দেশ থেকে ট্রাকে করে এখানে মাছ আসতে শুরু করে। আর ভোর রাত থেকে সেগুলো ট্রাক থেকে নামানো ও মার্কেটে নিয়ে আসাসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম শুরু হয়। অর্থাৎ তখন থেকেই পানি এবং বরফ দেওয়া শুরু করতে হয়। এবার শীত বেশি হওয়ার কারণে বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন
আব্দুল ওয়াহাব নামের একজন বলেন, আমরা যারা এসব কাজ করি তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর মানুষ হিসেবে তো কষ্ট হবেই। শীতের মধ্যে বরফ নিয়ে আসা সেগুলো ভেঙে মাছের প্যাকেটে দেওয়া কিংবা দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করার জন্য আবার প্যাকেট করা, পানি থেকে মাছ তোলা এগুলো কিছুটা কষ্টেরই। কাজ করতে করতে এক সময় মনে হয় হাত অবশ হয়ে যায়। তখন একটু আগুন ধরিয়ে আমরা হাত গরম করে নেই। এটাই আমাদের জীবিকা। এভাবেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
মোজাফফর হোসেন নামের এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, ঠান্ডার মধ্যে পানি ধরা কিংবা বরফ দেওয়া ঝুড়ি থেকে মাছ ওঠানোর কাজে তো কষ্ট হবেই। তারপরও কিছুই করার নেই। আমাদের জীবন জীবিকা এটার ওপর। কাজ তো করতেই হবে।
নীলক্ষেত মোড়ে জবুথবু হয়ে বসে কাজের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক দিনমজুরকে। তারা জানালেন, সকাল বেলার না এলে কাজ পাওয়া যায় না। চুক্তিভিত্তিক কাজকর্ম করতে হয়। সেজন্য ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ পাওয়ার আশায় এসব জায়গায় অপেক্ষা করেন তারা।
সোহরাব হোসেন নামের একজন জানান, দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরিভিত্তিতে আমরা কাজ করার জন্য প্রস্তাব করি। এরপর দামাদামি করে যে টাকা পাওয়া যায় সে অনুযায়ী কাজ করি। মালপত্র টানা থেকে শুরু করে রাজমিস্ত্রি কিংবা অন্যান্য কাজগুলো আমরা করে দেই। শীতের কারণে সকালবেলা মানুষজন কম থাকে। সেজন্য কাজও কম পাওয়া যায়। আমাদের কাছে কোনো শীত-বর্ষা নেই। সবসময় কাজ করতেই হয়। কারণ, কাজ না করলে পেটে ভাত পড়বে না।
একই কথা বললেন রিকশাচালক রফিকুল ইসলামও। বলেন, দৈনিক গ্যারেজের জমা, আমার খাওয়া খরচ এবং বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত টানা কাজ করি। এবছরের ঠান্ডা একটু বেশি। তাই কষ্ট বেশি হচ্ছে। কিন্তু সকালবেলা বের হলে স্কুলকলেজ এবং অফিসে যাওয়া মানুষজনের দেখা পাওয়া যায়। সেজন্য সকালবেলা বের হই। শুরুতে কিছুটা শীত লাগে। কিন্তু পরে রিকশা চালালে আর কিছু টের পাওয়া যায় না। কিন্তু ঠান্ডায় কাশির সমস্যা হয়ে যায়।
আরএইচটি/জেডএস