এমন আন্দোলন করব সরকার নিজের জন্য দোয়াও করতে পারবে না : মান্না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, একজন প্রশ্ন করেছে কাপড়ের মধ্যে সই করলেই কি ওরা (সরকার) চলে যাবে? আমরা এমন করে আন্দোলন করে যাব... সেই পরিস্থিতি আসছে, যখন তারা নিজের জন্য একবার দোয়াও করতে পারবে না।
রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকে এখানে আমাদের গণস্বাক্ষর কর্মসূচি দুপুর পর্যন্ত চলবে। এরপর কি আমাদের কর্মসূচি শেষ হয়ে যাবে? না, আগামীকাল ২টা পর্যন্ত আমাদের একই কর্মসূচি চলবে, পরশু ২টা পর্যন্ত চলবে। এভাবে জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে যাবে। তখন ফেব্রুয়ারি মাসে চলবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকার না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই কাজ চলবে।
তিনি বলেন, শুধু আমরা না, দেশের কোটি কোটি মানুষ সরকারকে ভুয়া মনে করে। চিন্তা করেন, সাকিব আল হাসানের মতো আন্তর্জাতিক মানের এক নম্বর ক্রিকেটার, উনি এখন দেশের জনগণের কাছে ভুয়া হয়ে গেছেন। কারণ, একটি ভুয়া নির্বাচনে তিনি ভুয়া এমপি হয়েছেন। আপনি (সাকিব আল হাসান) অনেক বড় খেলোয়াড়, নজর তো ওপরে যাবে, নীচে কেন গেল?
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনে ভোটার ছিল একজন। তিনি শেখ হাসিনা। উনি যাকে যাকে ভোট দিয়েছেন, উনিই জিতেছেন। বাকি কেউ জিততে পারেনি। এমন ভোট মানার কোনো প্রশ্ন আসে না। আমাদের সভা ভেঙে দিতে পারেন, নেতাদের গ্রেপ্তার করতে পারেন, গুম-খুন তো অনেকদিন চলেছে, আন্দোলন তো থামাতে পারেননি। পারবেনও না... এই আন্দোলন চলতেই থাকবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, একজন মন্ত্রী বলেছেন, সাত দিনের মধ্যে সিন্ডিকেট বন্ধ করে দেব, অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য কমাব। আমাদের সরকারের এটা হলো টপ প্রায়োরিটি। বলেন তো আজকে বাজারে চাল, পেঁয়াজ ও লবণ কত করে? সব জিনিসের দাম বেশি। গ্যাসেরও দাম বেশি, কিন্তু চট্টগ্রামে গ্যাস নেই। আমি তো তোমার (সরকার) কাছে চাল, ডাল ও তরকারি চাইনি। গ্যাস দেবে টাকা দিয়ে, সেই গ্যাস যদি দিতে না পারো, আমার যদি রান্নার চুলা না জ্বলে, আমার ছেলে মেয়ে যদি অভুক্ত থাকে, তাহলে তুমি (সরকার) আছো কেন? লজ্জা করে না?
সবগুলো ব্যাংক বন্ধের দশা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, টাকা নেই সরকারের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ছাপিয়ে ছাপিয়ে টাকা দিয়েছে। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংক এক সময় বলেছে, এভাবে টাকা ছাপালে এই টাকা কাগজ হয়ে যাবে। অতএব বন্ধ করে দেই। এটা কোনো দেশ, এটা কোনো ব্যাংক, এটা কোনো অর্থনীতি?
তিনি আরও বলেন, এই সরকার ডাকাতদের সরকার। ওরা নিজেরাই ডাকাত, ভোট ডাকাতি করেছে। এই সরকার জনগণের অধিকার হরণ করে নিয়ে গেছে। এখন আবার বলছে, ভোট ভালো হয়েছে। সবাই স্বীকৃতি দিচ্ছে আমাদের। পিটার হাস আমার নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে গেল। কই পিটার হাস আর নেত্রী শেখ হাসিনার ছবি তো আমরা কোথাও দেখলাম না। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বরং বলেছে, যে অত্যাচার ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে এই দেশ অগ্রসর হচ্ছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। সব ইউরোপীয় দেশগুলো তাই বলেছে। তারা (সরকার) ভোট জালিয়াতি করেনই, এখন জাতিসংঘের মহাসচিবের চিঠি নিয়েও জালিয়াতি।
বাংলাদেশ অভ্যুত্থানের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকারের জালিয়াতির বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ এখন কাঁপছে। তারা বিক্ষোভে রাজপথে নামবে। আমরা সেই আহ্বান জানাই।
সমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধী দলীয় চিপ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তারা কষ্ট দেয়। তারা জনগণকেও কষ্ট দেয়, রাজনৈতিক দলগুলোকেও কষ্ট দেয়। নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করে, হয়রানি করে... এগুলো সহ্য করেও আমরা টিকে আছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে কেউ অটোপাস সরকার বলে, কেউ নিশিরাতের সরকার বলে। অনেকে ‘আমি’ আর ‘ডামি’ নির্বাচনের কথা বলে।
প্রেস ক্লাবের সামনে নাগরিক এক্য আয়োজিত এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচি সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে চলে দুপুর পর্যন্ত।
এমএসি/কেএ