আমার লোকের ওপর হাত দিলে কেটে ফেলব : ওসিকে এমপি মোস্তাফিজ
আবারো আলোচনায় চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এবার নিজের লোকদের গ্রেপ্তার করলে পুলিশের ‘হাত কেটে’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দেওয়া সেই মুজিবুল হক চেয়ারম্যানের গায়ে হাত না দেওয়ার নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদকে এই হুমকি দেন এমপি মোস্তাফিজ। তিনি আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথোপকথনের অডিওটি বৃহস্পতিবারের (৪ জানুয়ারি)। যেটি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ওই অডিওটি পাঠকদের জন্য হুবহু দেওয়া হলো-
এমপি মোস্তাফিজ: আপনি কি বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছেন?
ওসি তোফোয়েল: স্যার কোথায়, স্যার?
এমপি মোস্তাফিজ: ছনুয়া (বাঁশখালী), পুলিশের হাফিজ গেছে…
ওসি তোফোয়েল: না না, স্যার ও-তো এখন নেই। ও থাকে ২টা পর্যন্ত। ও-তো চলে আসছে স্যার।
এমপি মোস্তাফিজ: কী জন্য গেছে?
ওসি তোফোয়েল: ওইটা-তো আমাদের নিয়মিত ডিউটি করার জন্য, প্রত্যেক বিটে বিটে একটা করে..
এমপি মোস্তাফিজ: আমার কোনো লোককে যদি হাত দেয়…হাত কেটে ফেলবো কিন্তু। এটি বলে দিলাম..
ওসি তোফোয়েল: হাত দেবে না স্যার, দেবে না স্যার। আমি এখনই বলে দিচ্ছি।
এমপি মোস্তাফিজ: ওইখানে নাকি আমাদের লোক ধরার জন্য হাফিজ গেছে..। আমাদের আলমগীর একটা আছে ওনাকে খুঁজতেছে।
ওসি তোফায়েল: ও-তো নাই স্যার। চলে আসছে-তো স্যার অনেক আগে।
এমপি মোস্তাফিজ: এমনি ঘুরেফিরে থাক। অসুবিধা নেই। আমার কোনো লোকজনের ওপর হাত দিলে, বহুত অসুবিধা হবে।
ওসি তোফায়েল: অবশ্যই স্যার। আপনি যেভাবে বলবেন ওইভাবে হবে। প্রশ্নই আসে না, হাত দেবে না স্যার।
এমপি মোস্তাফিজ: আপনি-তো আমার ঘরেও পুলিশ পাঠিয়েছেন।
ওসি তোফায়েল: ওইদিন-তো স্যার আপনার সঙ্গে কথা বললাম। পুলিশ পাঠাইনি স্যার। ওই... ওরা আপনার বাড়িতে এমনি নিয়মিত টহল দিতে গেছে। তাও সাদা পোশাকে যাতে, কেউ চিনতে না পারে। বিষয়টি স্যার আপনাকে ডিটেইলস বলছি। আরও আমি আপনার সম্মান বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছি। সাদা পোশাকে পুলিশ পাঠিয়েছি। কাউকে ধরার জন্য যায়নি স্যার।
এমপি মোস্তাফিজ: চাম্বলের মুজিবের (পিটার হাসকে হুমকি দেওয়া) ওপরও যেন কোনোকিছু না হয়।
ওসি তোফায়েল: হবে না স্যার, হবে না। ইনশাআল্লাহ...
আরও পড়ুন
অডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, অডিওটি সত্যিই আপনার কাছে আছে। যদি থাকে তাহলে যাদের থেকে পেয়েছেন, তাদের জিজ্ঞেস করেন। পরে ওসি অডিওটি কার কাছ থেকে পেয়েছে এই প্রতিবেদক থেকে জানতে চান।
মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রতিবেদককে ‘চুপ করে থাকেন’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
নানা কারণে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না এমপি মোস্তাফিজের। সম্প্রতি মিছিলে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর গত ৩০ নভেম্বর মোস্তাফিজুর রহমান ব্যাপক শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমার সময় তার সঙ্গীদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সাংবাদিকরা তাকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষযে প্রশ্ন করা হলে গালিগালাজ ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ ঘটনায় ওইদিন ভুক্তভোগী এক সাংবাদিক চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগটির তদন্ত করেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা জজ আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান। তিনি ৩ ডিসেম্বর ওইদিনের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর নির্বাচন কমিশন এমপির মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ডিসেম্বর একই আদালতে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হারুন মোল্লা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন তিনি।
এছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর এমপি মোস্তাফিজ বাঁশখালী থানার ওসিকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছিলেন। এই অপরাধে বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। সেটির তদন্তও চলছে।
এমআর/এসএম