গ্রেডের ফাঁদে শ্রমিকদের মজুরি কমানোর অপকৌশল বন্ধের দাবি

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে পুনর্নির্ধারণ, গ্রেডের ফাঁদে শ্রমিকদের মজুরি কমানোর অপকৌশল বন্ধ, জ্যাকার্ড অপারেটর ও প্রোডাকশন শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোর ১ নম্বর গ্রেডে পদায়ন, জ্যাকার্ড অপারেটর, নিটিং অপারেটরসহ সব ক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৌমিত্র কুমার দাস, রাহাত আহমেদ, আল আমিন হাওলাদার শ্রাবন, মোহাম্মদ সোহেল, আনিসুর রহমান আনিস, আনোয়ার খান প্রমুখ।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে নেতারা বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে ২৩ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছিল। গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি দাবির ন্যায্যতা যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করতে ব্যর্থ হয়ে, দালাল আর রাষ্ট্র প্রশাসন ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, অজুহাত তৈরি করে শক্তি প্রয়োগ, চাকরি হারানোর হুমকি প্রদানসহ নানা অপকৌশলে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করার পথ বেছে নেয়। নিম্নতম মজুরি বোর্ড গার্মেন্টস মালিকদের মজুরি প্রস্তাবকেই চূড়ান্ত মজুরি হিসাবে ঘোষণা করে। অন্যদিকে শিল্প পুলিশসহ রাষ্ট্রযন্ত্র গার্মেন্টস মালিকদের অপকৌশলের বিষয়ে প্রশ্ন না তুলে তাদের ক্রিড়ানকের ভূমিকা পালন করে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে পুলিশ প্রশাসন, মজুরি বোর্ডসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকা প্রমাণ করেছে গার্মেন্টস মালিকদের ইচ্ছায় রাষ্ট্রযন্ত্রের ইচ্ছা। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গার্মেন্টস মালিকদের ইচ্ছা অনুমোদনের রাবার স্ট্যাম্প মাত্র।
রাষ্ট্র এবং সরকার, দেশের কারাখানা মালিক আর বিদেশি ক্রেতাদের সস্তা শ্রম লুটের সিন্ডিকেটের পক্ষ নেওয়ার নিন্দা এবং নিত্যপণ্যের বাজার দর, মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি, প্রতিযোগী দেশসমূহের শ্রমিকের মজুরির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়ে বলেন, নামমাত্র মজুরি নির্ধারণের পর সেই মজুরিও প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়ন না করার বিভিন্ন অপকৌশল নিচ্ছে গার্মেন্টস মালিকরা। গ্রেড কাঠামোয় নিজেদের ইচ্ছামত পরিবর্তন করে শ্রমিকদের নতুন গ্রেড কাঠামোয় সঠিকভাবে পদায়ন না করে নিচের গ্রেডে পদায়ন করে শ্রমিকদের প্রকৃত প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জ্যাকার্ড ও নিটিং মেশিন অপারেটরদের এখনো দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজের ভিত্তিতে মজুরি ধরা হচ্ছে। প্রোডাকশন ভিত্তিক শ্রমিকরা সর্বোচ্চ দক্ষ শ্রমিক হওয়ার পরেও তাদের নতুন মজুরি কাঠামোর ১ নং গ্রেডে পদায়ন করা হচ্ছে না। গার্মেন্টস মালিকরা বিদেশি ক্রেতাদের কাছে মূল্য বৃদ্ধির আবেদন করতে যেয়ে শ্রমিকদের মজুরি ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, প্রতি গ্রেডের মজুরি পার্থক্য প্রায় ২ হাজার টাকা ইত্যাদি যে তথ্য দিচ্ছেন শ্রমিকরা প্রাপ্ত মজুরিতে সেই তথ্যের প্রতিফলন দেখছে না। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
তারা আরও বলেন, মজুরি আন্দোলনে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। ভয় দেখিয়ে, মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি, এসডিজির গাল-গল্প শুনিয়ে, অর্ধভুক্ত শ্রমিকদের ক্ষোভ বেশিদিন দমন করতে পারবেন না।
ওএফএ/এমএ