ভোটাররা ভোট দিতে না গেলেও নজরদারিতে পড়বে : ইফতেখারুজ্জামান
আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে একটি সাজানো ও আত্মঘাতীমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেশে অনেক কিছুই হবে। আমরা একটি আত্মঘাতীমূলক প্রতিযোগিতায় নামছি।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশ আয়োজিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণটাই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই ভোট দিতে যাবে না, তবে ভোটাররা ভোট দিতে না গেলেও হয়ত তাদের ক্ষমতাসীনদের নজরদারির মধ্যে পড়তে হবে। তবে সবকিছু আইনগতভাবেই হবে, এমনকি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চ্যালেঞ্জও করা যাবে না। সর্বোপরি এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দলের ক্ষমতাও পাকাপোক্ত হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, দেশে নির্বাচন হবে, কিছুদিন প্রতিবাদ হবে, এরপর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হবে, বিদেশি অংশীজনরাও অনেকেই নাকোশ হবে। এমনকি কিছুদিন তারা প্রতিবাদ করবেন, এরপর আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। বিদেশি অংশীজনরাও ব্যবসায় চলে আসবে।
আরও পড়ুন
নির্বাচনী হলফনামা প্রসঙ্গে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে হলফনামা এসেছে, তা হলো আমি আমার প্রার্থীর সম্পর্কে জানব, তার আয়-ব্যয় ও সম্পদ সম্পর্কে জানব এবং সে অনুযায়ী আমি আমার রায় দেব। এটা ছিল আমাদের প্রত্যাশার জায়গা। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা কিছুই করতে পারিনি। হলফনামা নিয়ে আমরা যেভাবে কথা বলছি, আগামী সংসদে হয়ত হলফনামা প্রথাটিই বাতিল হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের যদি বাস্তবে ক্ষমতা প্রয়োগের সক্ষমতা এবং সৎ সাহস থাকত, তাহলে অনেক ব্যবস্থা নিতে পারত। এমনকি আইন অনুযায়ী তথ্য গোপনের কারণে অনেকেরই প্রার্থিতা বাতিল হতো। কারণ, এবার শুধু তথ্য গোপনই হয়নি, দৃষ্টান্তও স্থাপনও হয়েছে৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে অর্থে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের সুনির্দিষ্ট এখতিয়ার আছে অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং আইনগতভাবে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া। আইনের চোখে সবাই সমান, এই দৃষ্টিতে দুর্নীতি দমন কমিশন যদি কাজ করত, তাহলেও অনেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারত না। তবে নির্বাচন কমিশনের একটা বুলি আছে অভিযোগ আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদকের আইনেই কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। দেশবাসীর চোখে অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো আসছে, কিন্তু তাদের চোখে পড়ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা সম্পদ বৃদ্ধির জন্য রাজনীতি করি, নাকি জনগণের জন্য রাজনীতি করি? তথ্য প্রমাণ তো বলছে নিজেদের স্বার্থেই রাজনীতি করি।
সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা যারা সংখ্যাগুরু আছি, ধর্মীয় মাপকাঠিতে সংখ্যালঘুদের অধিকারে গুরুত্ব দিইনি। আধিবাসী আন্দোলন, সংখ্যালঘু আন্দোলনসহ এ জাতীয় আন্দোলনগুলোকে আমরা সকলের জাতীয় আন্দোলনে রূপ দিতে পারিনি। আর এ কারণে আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে, এমনকি বর্তমানেও দিতে হচ্ছে।
এ সময় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এখন সমান্তরাল বাস্তবতায় অবস্থান করছি। আমাদের অনেক অর্জন আছে, যেগুলোর জন্য আমরা নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করি। তবে এসব অর্জনের পেছনেও আমাদের কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। আমাদের সমাজে এখনও যথেষ্ট পরিমাণ বৈষম্য আছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায্যতায় সমস্যা আছে। বিডিএসের খানা জরিপেও বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন যেহেতু সামনে আছে, জনপ্রতিনিধিদর কাছে এ বিষয়গুলো আমরা নিয়ে যাব। এর মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে দৃষ্টিপাত করেছি। ১১টি বিশেষজ্ঞ টিম করেছি। ১৩০ জনের মতো সদস্য আছে, প্রতি টিমে ১০/১৫ জনের মতো সদস্য ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও নীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আলম, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলীসহ আরও অনেকে।
টিআই/এসকেডি