পদোন্নতি নিয়ে দুদকে তোলপাড়!
উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাত কর্মকর্তা। দীর্ঘ এক যুগ পর পদোন্নতি পেয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও সংস্থাটিতে বিপরীত চিত্র রয়েছে। দীর্ঘ ১১-১৫ বছর ধরে একই পদে কর্মরত থেকে পদোন্নতি না পেয়ে অনেক কর্মকর্তা এখন চরম হতাশায় ভুগছেন।
অভিযোগ উঠেছে, পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুসরণ করা হয়নি। যা দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি বিধিমালা-২০০৮ এর সরাসরি লঙ্ঘন। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা যে প্রতিষ্ঠানের কাজ, সেখানেই অনিয়মের এমন অভিযোগ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
জ্যেষ্ঠতার তালিকায় সবচেয়ে সিনিয়র পাঁচ উপপরিচালক গোলাম ফারুক, জহিরুল হুদা, নাছির উদ্দিন খান, মীজানুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের বাদপড়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কিংবা ফৌজদারি কোনো মামলা না থাকলেও বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন ওই কর্মকর্তারা। অথচ একই ব্যাচের তিন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে মহাপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় প্রথম দিকে থেকেও বাদ পড়েছেন পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ব্যাচের উপপরিচালক মো. রফিকুজ্জামান, মোনায়েম হোসেন, মলয় কুমার সাহা, আব্দুল মাজেদ ও উপপরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক। ২০১২ সালের উপপরিচালক ব্যাচ হিসেবে জ্যেষ্ঠতার তালিকার প্রথম স্থানে থাকা উপপরিচালক মো. রফিকুজ্জামান, তৃতীয় স্থানে মোনায়েম হোসেন, চতুর্থ স্থানে মলয় কুমার সাহা, ষষ্ঠ স্থানে আব্দুল মাজেদ ও নবম স্থানে রয়েছেন সৈয়দ তাহসিনুল হক।
অথচ গত ২৭ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে একই ব্যাচের সাত কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে যাদের অবস্থান মোহাম্মদ ইব্রাহিম দ্বিতীয় স্থানে, তালেবুর রহমান পঞ্চম, জাহাঙ্গীর হোসেন সপ্তম, মোহাম্মদ আবুল হোসেন অষ্টম, এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা ১০ম , মোজাহার আলী সরদার ১১তম ও জালাল উদ্দিন আহমদ ১২তম। এদের মধ্যে তাহসিনুল হক ছাড়া সবাই ২০১২ সালের ১২ মার্চ উপপরিচালক হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
পদোন্নতির এমন বিতর্ক নিয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদক আইন-বিধিমালা অনুসরণ করে কমিশনের অনুমোদনক্রমে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপপরিচালক থেকে পরিচালক পদে এবারের পদোন্নতির ক্ষেত্রে দুটি ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে উপপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ২০০৭ ও ২০১২ সালের ব্যাচের কর্মকর্তারা বিবেচনায় ছিল। তবে ২০০৭ ব্যাচের পাঁচ উপপরিচালক এর আগেও তিনবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কিংবা ফৌজদারি কোনো মামলা নেই। তারপরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় নিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
তারা আরও বলেন, ২০১২ ব্যাচের ক্ষেত্রেও পদোন্নতি বঞ্চিতের রাজনৈতিক মতাদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কেননা জ্যেষ্ঠতায় ওপরের দিকে থাকা সত্ত্বেও এই ব্যাচের ৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। যাদের মধ্যে চারজন কর্মকর্তাকে প্রেষণে দুদকের বাইরে বদলি করা হয়েছিল। কাগজপত্রে প্রেষণে পাঠানোর কোনো কারণ উল্লেখ না থাকলেও বর্তমান কমিশন মনে করছেন— ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন শাস্তিমূলকভাবে দুদকের বাইরে বদলি করেছে। যদিও শাস্তিমূলক কোনো বক্তব্য বদলির আদেশ কিংবা ওই কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নথিতে উল্লেখ নেই্। সে হিসেবে পদোন্নতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই বিষয়টি বিবেচনায় আসা উচিত নয়। এছাড়া, আগেও ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী নামে এক কর্মকর্তাকে প্রেষণে দুদকের বাইরে বদলি করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে অবসরে গিয়েছেন। ফলে কর্মকর্তা হিসেবে কাজের যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও বিধিমালা বিবেচনায় নিলে কোনোভাবেই তাদের বঞ্চিত করতে পারেন না।
বিধিমালায় কী বলা হয়েছে
চাকরি বিধিমালা—২০০৮ এর ১৬ নম্বর ধারায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। বিধি-১৬ এর উপবিধি (১) অনুসারে কোনো পদে কোনো কর্মচারীর জ্যেষ্ঠতা সেই পদে তাহার যোগদানের তারিখ হতে গণনা করতে হবে।
আর উপবিধি-(৩) এ বলা হয়েছে— একাধিক ব্যক্তিকে একই সময়ে পদোন্নতি দেওয়া হলে যে পদ হতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সেই পদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা স্থিরীকৃত হবে। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী অনুরূপ জ্যেষ্ঠতা দাবি করতে পারবেন না।
চলতি বছরে দুদকে কর্মরত ৫৯ জন উপপরিচালকের চূড়ান্ত জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রকাশ করা হয়। কমিশনের অনুমোদনকৃত জ্যেষ্ঠতা তালিকার প্রথম ২২ উপপরিচালক হলেন- মো. গোলাম ফারুক, মোহাম্মদ জহিরুল হুদা, এম এম শাব্বির হাসান, মো. নাছির উদ্দিন, খান মো. মীজানুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, মো. রফিকুজ্জামান, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. মোনায়েম হোসেন, মলয় কুমার সাহা, মো. তালেবুর রহমান, মো. আব্দুল মাজেদ, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মোহা. আবুল হোসেন, সৈয়দ তাহসিনুল হক, এস এম আখতার হামিদ ভূঞা, মো. মোজাহার আলী সরদার, জালাল উদ্দিন আহমদ, মো. আনোয়ারুল হক, বেগম সেলিনা আখতার, মিসেস রেভা হালদার, মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ও মোসাম্মৎ মাহফুজা খাতুন।
আরএম/এমজে