অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রে বেড়েছে শ্রমিকদের প্রাণহানি
২০২৩ সালে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন সেক্টরে এক হাজার ৪৩২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৫০২ জন। ২০২২ সালে নিহত হয়েছিলেন ৯৬৭ জন এবং আহত হয়েছিল ২২৮ জন। গত বছরের তুলনায় শ্রমিকদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে ৪৬৫ এবং আহতের সংখ্যা বেড়েছে ২৭৪ জন।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে ওশি ফাউন্ডেশন কর্তৃক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এসএম মোর্শেদ জানান, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ৩২৯ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২৭৭ জন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ১০৩ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২২৫ জন।
সেক্টরভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন ও আহত হয়েছে ১২৭ জন, ২২০ জন দিনমজুর নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছেন ৭৬। নির্মাণ খাতে নিহত ১৪৯ এবং আহত ৭২ জন। কৃষি শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৬ ৩ আহত হয়েছেন ১০ জন (যাদের মধ্যে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৭১ জন)। পোশাক শিল্পে নিহত ৬৪ ও আহত ৮৯ জন। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে নিহত ৯৪ ও আহত ১৫ জন। মৎস্যখাতে নিহত ৫৩ ও আহত ২২ জন। সেবাখাতে নিহত ২৬ ও আহত ২২ জন।
সিরামিক খাতে নিহত ১৭ ও আহত ০৯ জন। চামড়াশিল্পে নিহত ৪ ও আহত ১৭ জন, ইটভাটা/ব্রিকফিল্ড নিহত ১১ ও আহত ৬ জন, জাহাজভাঙ্গা/শিপব্রেকিং এ নিহত ৭ ও আহত ২৯ জন, চা শ্রমিক নিহত ১ ও আহত ৬ জন, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিহত ৩ ও আহত ২ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবহন খাতে নিহত হয়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক। ২০২৩ সালে এ খাতে নিহত ৬৩৭ ও আহত ১২৭ জন, অথচ ২০২২ সালে নিহত ১০৫ ও আহত ২৯ জন।
প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থেকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, দেয়াল-ভবন-ছাদ ও ভূমিধসের কথা বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে ওশির যেসব সুপারিশ করে সেগুলো হলো, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এ উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা; পোশাক খাতের মত অন্যান্য সেক্টরেও শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেইফটি কমিটি গঠন করে তোলা; কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন দশ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ডভুক্ত করা।
এছাড়া, আহত শ্রমিকের পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা; শিল্প খাতের সকল সেক্টরে ইআইএস চালু করা; সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডাটাবেজ তৈরি করা; কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত/আহত শ্রমিকদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমে অর্ন্তভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ হতে প্রদান করা; শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা; কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা; শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা-২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাকি রিজওয়ানা ও কো ম্যানেজমেন্ট অফিসার নুসরাত জাহানসহ অনেকে।
ওএফএ/কেএ