যুক্তরাজ্য থেকে ফিরলেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন, বেবিচকের সার্কুলার
প্রাণঘাতী করোসনা ভাইরাসের নতুন একটি স্ট্রেনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
সার্কুলারে বেবিচক জানায়, বাংলাদেশে আগত প্রত্যেক যাত্রীর কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে আগত সব যাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। যাত্রীরা কে কোথায় কোয়ারেন্টাইনে থাকবে সেটা নির্ধারণ করবেন বিমানবন্দরে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সার্কুলারটি দেশের সব বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। কেবল যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের এই ব্যবস্থা নেয়া হলেও ভাইরাসের নতুন এই স্ট্রেন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়েছে।
লন্ডন থেকে যে-ই দেশে ফিরুক না কেন, তাকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে- ২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে ওই বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের একটি পরিবর্তিত রূপের (স্ট্রেন) সন্ধান মেলে। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির নতুন এই ধরন আগেরগুলোর চেয়ে বেশি সংক্রামক বলে এখনও জানা যাচ্ছে। এরপর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতসহ বেশ কটি দেশ। ফ্লাইট বাতিল করা দেশের মধ্যে রয়েছে কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, ইরান, সৌদি আরব।এছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ এবং লাতভিয়া।
নতুন স্ট্রেন নিয়ে কেন উদ্বেগ?
মূলত তিনটি কারণে করোনাভাইরাসের নতুন এই স্ট্রেনটি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
• এটি ভাইরাসের অন্য সংস্করণগুলোকে প্রতিস্থাপিত করছে
• এটির বিভাজন বা রূপান্তর ভাইরাসের কিছু অংশে পরিবর্তন আনে, যা গুরুত্বপূর্ণ
• এসব বিভাজনের মধ্যে বেশ কিছু ল্যাবে পরীক্ষার পর দেখা গেছে যে এগুলো মানুষের দেহের কোষকে সংক্রমিত করার ভাইরাসের যে সক্ষমতা তা বাড়ায়
এরইমধ্যে ২৪ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানে বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেছিলেন যুক্তরাজ্যের ফ্লাইটের বিষয়ে বিমান, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ করছে। বেবিচকসহ সবাই সজাগ আছে। আমরা প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবো।
তবে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বিমান চলাচল বন্ধ হবে, নিশ্চিত করে এমন কোনো তথ্য কেউ জানাননি। তবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে আছে বলে ২২ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন বিমান সচিব।
করোনার নতুন একটি ধরন দেশেও রয়েছে
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা (হোল জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটিতে নতুন আরেকটি শক্তিশালী ধরনের অস্তিত্ব মিলেছে। এটির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের মিল আছে। তবে এটি এখনো অতটা ভয়ংকর নয়। এর প্রভাব কতটুকু, সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক গবেষক দল এই তথ্য জানিয়েছেন। গবেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে মূলত ভাইরসাটি বাহককে আক্রমণ করে। এই স্পাইক প্রোটিনে ১ হাজার ২৭৪টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এর মধ্যে ‘ডি৬১৪জি’ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডটি আগে থেকেই বাংলাদেশে সক্রিয় ছিল।
প্রতিবেশি ভারতের ৬ জন করোনার নতুন ধরনে আক্রান্ত
করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির সংক্রমণ প্রতিবেশী দেশ ভারতের ছয় জনের দেহেও শনাক্ত হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনার নতুন ধরনে আক্রান্ত এসব ভারতীয় সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন। তাদের সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে ভারতও যুক্তরাজ্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
দেশে ভ্যাকসিনের কী অবস্থা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন, ভ্যাকসিন আনার পুরো প্রস্তুতি শেষ। জানুয়ারিতেই দেশে ভ্যাকসিন আসবে। জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশে অক্সফোর্ডের তিন কোটি করোনার ভ্যাকসিন আসবে। এখন ভ্যাকসিন তৈরি ও অনুমোদনের অপেক্ষা। মন্ত্রীর ভাষায়, শুরুতে করোনার চিকিৎসা পদ্ধতি জানা ছিল না। ফলে শুরুতে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন বলে মনে করছেন তিনি।
আমাদের (বাংলাদেশের) দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের নিচে। আর ১৮ বছরের নিচে ৪০ শতাংশ মানুষ। এ মুহূর্তে এদের ভ্যাকসিনের দরকার নেই। এছাড়া গর্ভবতী নারী ও কিছু অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক
করোনার সর্বশেষ বৈশ্বিক পরিস্থিতি
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার তথ্য অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫৬ জন। সারা বিশ্বে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৮ কোটি ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯২ জন। আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯৩ জন।
করোনা পরিস্থিতির মোটামুটি একবছরের মাথায় এসে আক্রান্ত, সুস্থ, মৃত্যু বাদেও আলোচনায় রয়েছে ভ্যাকসিন। বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে টিকা দেয়া শুরু করে দিয়েছে। তবে এরই মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির একটি পরিবর্তিত রূপ (স্ট্রেন) নিয়ে নতুন করে সতর্কতা জারি করতে হয়েছে বিভিন্ন দেশকে।
বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার ৮২৯ জন। মারা গেছে প্রায় ৩ লাখ ৪৩ হাজার৩৪০ জন।
বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যে দেশে আরও ৩০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৭ হাজার ৫০৯ জনে। নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ১৮১ জন। এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ১১ হাজার ২৬১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এআর/এনএফ