হার্টের রিংয়ের দাম বেশি নেওয়া ও অযথা অস্ত্রোপচার মানবাধিকার লঙ্ঘন
নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে হার্টের রিং বিক্রি এবং অনর্থক অস্ত্রোপচার মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। যেসব আমদানিকারক সিন্ডিকেট করে অনৈতিক বাণিজ্য করছে এবং যেসব অসাধু চিকিৎসক অর্থের লোভে অযথা রোগীদের অস্ত্রোপচার করে হয়রানি করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক ফারহানা সাঈদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, নির্ধারিত দামে হার্টের রিং সরবরাহ না করার হুমকি দিচ্ছেন আমদানিকারকরা। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোস্টন সায়েন্টিফিক লিমিটেডের প্রোমুস প্রিমিয়ার/হার্টে বসানোর রিং ভারতে বিক্রি হয় ১২ হাজার রুপি। অথচ বাংলাদেশে ওই একই রিং কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ওষুধ প্রশাসন থেকে রিংয়ের দাম পুনর্নির্ধারণ করে দেওয়ায় আমদানিকারকরা এখন হুমকি দিচ্ছেন তারা রিং সরবরাহ করবেন না।
অভিযোগ রয়েছে, রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসক মিলে দেশে হার্টের রিংয়ের অনৈতিক বাণিজ্য করছে। হার্টের রিংয়ের বাণিজ্য নিয়ে দেশে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেট দেশের রিংয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি করছে।
অন্যদিকে, কিছু অসাধু চিকিৎসক অনৈতিকভাবে অযথা রোগীদের বর্ধিত মূল্যে অস্ত্রোপচার করছে, যা রোগীদের জীবন নিয়ে খেলার শামিল।
কমিশন মনে করে, সমন্বিতভাবে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করা প্রয়োজন। হার্টের রোগীদের জন্য রিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে হার্টের রিং সংক্রান্ত দামের বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।
সম্প্রতি সরকার হার্টের রিংয়ের দাম কমিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আলোচনা নতুন করে স্থান পেয়েছে। এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের বাঁচার অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
হার্টের রিং কম খরচে সরবরাহ করা অত্যাবশ্যকীয়। কমিশন মনে করে জনস্বার্থ বিবেচনা, সরকারের গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত ও ব্যবসায়িক নৈতিকতার সুষ্ঠু সমন্বয় প্রয়োজন।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে তুলনামূলক বেশি দামে রিং বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যায়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক নৈতিকতা সংক্রান্ত বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি কোনো সিন্ডিকেট যাতে জনস্বার্থ বিরোধী অবস্থান নিতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। কোনো প্রকার সংকট যাতে রোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত না করে সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
সরকার জনসাধারণের বৃহত্তর কল্যাণে বিবিধ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ অবস্থায়, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে মানুষের চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রিং নির্ধারিত দামে সরবরাহ করার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
পাশাপাশি, সিন্ডিকেট করে আমদানিকারকদের অনৈতিক বাণিজ্য ও অর্থের লোভে অযথা রোগীদের অস্ত্রোপচার করে হয়রানিকারী চিকিৎসকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানায় কমিশন।
জেইউ/কেএ