মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছিল : শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা সরকার পাকিস্তানকে সহযোগিতা করলেও মার্কিন জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের পাশে ছিল। সোভিয়েত রাশিয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোও আমাদের সমর্থন করে। সবার সমর্থন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাই।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, বাঙালি জাতি বীরের জাতি। ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন— এ বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না। এবারের বিজয় দিবসে সারা বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত আনন্দের সাথে অংশগ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাশে ছিল মিত্র বাহিনী, মিত্র বাহিনীর শক্তি ভারত। ভারতের জনগণ, ভারতের তৎকালীন সরকার, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়। ভারতের এমন কোনো দল ছিল না যে, আমাদের সমর্থন দেয়নি। এই মিত্র শক্তির সাথে সাথে আরো অন্যান্য দেশেরও সমর্থন পাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ২০০১ সালের জুলাই মাসে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ২৬ বছরে প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা স্থানান্তর করা হয়। এর আগে একবারও এমন হয়নি। সেই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে অনিয়ম করে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, গ্যাস বিক্রি মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতা আসে। তবে গ্যাস দিতে পারে নাই।
তিনি বলেন, বিএনপির দুঃশাসন, দুর্নীতির কারণে দেশে ইমার্জেন্সি হয়। ইমার্জেন্সি সরকারের কথা ছিল মাত্র তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে। তারাও ক্ষমতার লোভে চেপে বসে। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের জনগণকে, ধন্যবাদ জানাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে। সবাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আমার মুক্তির জন্য ২৫ লক্ষ মানুষের সিগনেচার সংগ্রহ করে। তখন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তার অফিসে পৌঁছে দেয়। এটা অন্য কোনো দলের পক্ষে সম্ভব না। আওয়ামী লীগ শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। আওয়ামী লীগের উপর যত আঘাত আসুক ঝড়ঝাপটা আসুক, আওয়ামী লীগ জনগণের হয়ে লড়াই করে। জনগণের ভোটের-ভাতের অধিকার অর্জন করে। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই নির্বাচনে ২৩৩টি সিটে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। আর অপরদিকে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট। আমি এজন্য কথাগুলো বললাম, কারণ তাদের চরিত্র বদলাই নাই।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস জনগণ মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতার পকেট থেকে জন্ম নেয় নাই। এই অগ্নিসন্ত্রাস করে আওয়ামী লীগকে কখনো উৎখাত করা যাবে না। যারা রেললাইন উপড়ে ফেলে, মানুষ হত্যা করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা বলেছিল— আমরা আছি পল্টনে তারেক কেন লন্ডনে। তারেকের নির্দেশে মানুষ পোড়ানো হচ্ছে। তাদেরকে জনগণ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বর্তমান বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষ জানে কারা তাদের ভাগ্য উন্নয়ন করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করছে। তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের নামে এবারও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে। বিএনপি জানে; জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই তারা মরিয়া হয়ে নির্বাচন বানচাল এবং সরকার উৎখাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারে, রেললাইন কেটে দেয়- সেই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
এমএসআই/এমজে