পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা বঞ্চিত ১০৫ উপ-সচিবের আকুতি
যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি বঞ্চিত ১০৫ জন উপ-সচিব। সকল যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও ক্রমাগতভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন ও জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য হওয়ায় বঞ্চিতরা সামাজিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন— এমন দাবি করে আবেদন করেছেন তারা।
বাংলাদেশ সচিবালয়ের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ৩ ডিসেম্বর পাঠানো আবেদনের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ৮টি দপ্তরের প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, পদোন্নতির সকল যোগ্যতা ও শর্ত পরিপালন করা সত্ত্বেও যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান না করে ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। নিয়মিত ব্যাচের যখন যুগ্ম-সচিব হিসেবে পদোন্নতি হয়, তার পূর্বেই অথবা সেই সময় অনেকেই উক্ত পদে পদোন্নতির সকল শর্ত পূরণ করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, পরবর্তী অনেকগুলো জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তারা যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন অথচ ১০৫ জন উপ-সচিবকে এখনও পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি। এভাবে ক্রমাগত আমাদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রাপ্য পদোন্নতি হতে অজ্ঞাত কারণে বারংবার বঞ্চিত হওয়ায় মানসিক, শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পতিত হয়েছে বলে বঞ্চিতরা মনে করছেন।
আবেদনে তারা কিছু নিয়ম-নীতি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে-
১. সরকারের উপ-সচিবের পূর্বের কোনো ক্যাডার পরিচিতি থাকবে না এবং সকল উপ-সচিব সম-অধিকার ও সমমর্যাদাসম্পন্ন হবেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক Civil Appeal Nos. 294-98 of 2003 এ প্রদত্ত রায়ে বলা হয়েছে, ‘যখনই কোনো কর্মকর্তা ২০০২ সনের বিধিমালা অনুসারে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হলেন, তাহা যে কোন ক্যাডার হতেই হউক না কেন, তিনি তখন একজন পরিপূর্ণ উপ-সচিব। তাহার পূর্বের ক্যাডার পরিচয় তখন বিলুপ্ত হবে। তিনি সচিবালয়ের উচ্চতর উপ-সচিব পদে তখন তিনি অধিষ্ঠান। সেই অধিষ্ঠা (Status) লইয়াই অন্য সকল উপ-সচিবের সহিত এক শ্রেণিভুক্ত হইয়া সম-অধিকার লইয়া তিনি পরবর্তী উচ্চতর যুগ্ম-সচিব পদে বা পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হইবার জন্য বিবেচিত হইবেন।’
২. পদোন্নতির ভিত্তি হবে মেধা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক সুপারিশকৃত একটি ব্যাচের সম্মিলিত তালিকাই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি।
৩. ২০০২ সালের সরকারের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে নিয়মিত ব্যাচের সাথে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন: যার মধ্যে রয়েছে-
ক) উপ-সচিব পদে অন্যূন পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে অন্যূন ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা; বা
খ) উপ-সচিব পদে অন্যূন তিন বছর চাকরিসহ ক্যাডার পদে অন্যূন ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা।
সেই হিসেবে আবেদনকারীরা স্ব-স্ব ব্যাচের সাথে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং নিয়মিত ব্যাচের সাথেই পদোন্নতি প্রাপ্য।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ যুগ্ম-সচিব পদোন্নতির আদেশে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের মোট ১৮০ জন পুলভুক্ত উপ-সচিবকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের মেধা তালিকার সর্বশেষ কর্মকর্তা (ক্রমিক নং-৩০০ ও আইডি নং- ১৫৫০০) এবং সাবেক ইকোনমিক ক্যাডার হতে প্রশাসন ক্যাডারে মার্জ হওয়া ২২তম ব্যাচের মেধা তালিকার সর্বশেষ কর্মকর্তাও (আইডি নং- ২০৪১৪) পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন।
অথচ প্রশাসন ক্যাডার থেকে পুলভুক্ত না হওয়ার কারণে সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্যাডারের সিনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তাদের (১৩তম থেকে ২১তম ব্যাচ) এবং এমনকি ২২তম ব্যাচের কোনো কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। যা জ্যেষ্ঠতা হরণের পাশাপাশি যা সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আবেদনে বলা হয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়, ১৯৮৩ সালের বিসিএস সিনিয়রটি রুলস, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং ন্যাচারাল জাস্টিস অনুসরণ করে অতি দ্রুত যার যার নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা প্রদানপূর্বক যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করার জন্য আবেদন করেছে কর্মকর্তারা।
আরএম/এসকেডি