স্বাক্ষর অস্বীকার করা ভোটারকে নিয়েই ইসিতে গোপালগঞ্জের প্রার্থী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সদ্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন কাবির হোসেন। তিনিও আটকে গেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনের নিয়মে। এটাকে হাস্যকরই মনে হয়েছে তার। নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে স্বাক্ষরের পর যাচাই-বাছাইয়ের সময় জেলা রিটার্নিং অফিসের কর্মকর্তাদের সামনে অস্বীকার করা ভোটারকে নিয়ে ইসিতে আপিল করতে এসেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) অবৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা ভিড় করছেন আগারগাঁওয়ের ইসি ভবনে।
অন্যান্য প্রার্থীদের মতো কাবির হোসেনও আজ প্রার্থীতা ফিরে পেতে আপিল করতে আসেন আগারগাঁওয়ের ইসি ভবনে।
আপিলের পর কাবির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছিলাম। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে এই ফরম কিনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি তো উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলাম জনসমর্থনেই। অথচ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে এসে আমার মনোনয়ন বাতিল হলো জনসমর্থনের সমস্যায়। এটা খুবই হাস্যকর। আমার মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে জানতে পারি, এক শতাংশ ভোটারের যে বাধ্যবাধকতা ছিল সেটি আমার নেই। একজন ভোটারের ত্রুটি তারা পেয়েছেন। পরে আমি যে ভোটারের ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে আলোচনা করি।’
‘‘তখন এই ভদ্রলোক বললেন, ‘আমার বাড়িতে ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ এসেছিল। যাদের দেখে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরে আমি অস্বীকার করেছি।’ এখন উনি আমার সাথে এসেছেন, অ্যাফিডেভিট করেছেন এবং আপিল শুনানির সময় থাকবেন। আইনের প্রতি আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। আমার বিশ্বাস মনোনয়ন ফরমের বৈধতা ফিরে পাব।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা যেহেতু দলীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য কোনো বাধা দেননি, সেহেতু আমি প্রত্যাশা করি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব। এলাকায় আমার অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে।’
একই সমস্যার কথা জানান টাঙ্গাইল গোপালপুরের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ওরফে ঠান্ডা তালুকদার।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি তিন তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। এবার আমি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সমস্ত ডকুমেন্ট জেলার অফিসারের কার্যালয় জমা দিয়েছি। জেলা নির্বাচন অফিস থেকে ১০ জন ভোটারের তথ্য যাচাইয়ের ব্যাপারে তদন্ত করতে যায়। একজন ভোটারের বাড়িতে যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পুলিশের দল নিয়ে যায়, তখন ওই ভোটার স্বাভাবিকভাবে ভয় পেয়ে যান।’
‘ভোটার তো সাধারণ মানুষ। যখন পুলিশসহ তারা বাড়িতে গেছে তিনি ভয়ে স্বাক্ষরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এখন পর্যন্ত সেই ভোটার আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কাছে জিম্মি। শুধুমাত্র একজন ভোটারের অসংগতিপূর্ণ বক্তব্য বা তথ্যের কারণে জেলা রিটার্নিং অফিসার আমার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন।’
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি অংশগ্রহণমূলক ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমার মনোনয়ন তো আমি বৈধতা ফিরে পাব।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর থেকে বাছাই শুরু হয়, শেষ হয় ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।
জেইউ/কেএ