আসল পুলিশ ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিতেন নকল এসপি!
১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানা এলাকার দায়িত্বরত এক পুলিশ সার্জেন্টকে ফোন দেন মো. সাগর ওরফে রিমন (২৩)। ফোনে সাগর নিজেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পরিচয় দেন। এরপর ওই সার্জেন্টকে একটি বিকাশের দোকানে যেতে বলেন। দোকানে নিজের পরিচয় উল্লেখ করে একটু কথাবার্তা বলে সার্জেন্টকে পুনরায় কর্মস্থলে চলে যেতে নির্দেশনা দেন তিনি।
সার্জেন্ট চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার দোকানিকে ফোন দেন সাগর। এরপর সরকারি কাজে টাকা লাগছে বলে ৫২ হাজার টাকা একটি নম্বরে পাঠাতে বলেন। এসময় তাকে বলা হয় আগে যে সার্জেন্ট দোকানে গিয়েছিল তিনিই টাকা পরিশোধ করে দেবেন। একবার পুলিশের পোশাক পরা লোক আসায় বিশ্বাস করে সাগরের কথামতো দোকানি টাকা পাঠিয়ে দেন।
পরে ওই সার্জেন্ট আর টাকা নিয়ে আসেননি। অন্যদিকে ফোন দেওয়া সাগরের কোনো পরিচয় কিংবা তার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগের সুযোগও পাচ্ছিলেন দোকানি। একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন এসপি পরিচয় দেওয়া সাগরের মাধ্যমে তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দোকানি ২৭ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার দায়িত্বভার পায় নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তারা তদন্ত করে ক্লু-লেস মামলাটির রহস্য উদঘাটন করে। পরে রাজশাহীর মোহনপুর এলাকা থেকে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) অভিযুক্ত সাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থাটি। গ্রেপ্তারের পর নিজেদের কার্যালয়ে এনে সদরঘাট থানা এলাকার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।
নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার (ডিসি) লিয়াকত আলী খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত ওয়েবসাইট কিংবা কোনো মাধ্যম থেকে নম্বর সংগ্রহ করে টার্গেটকৃত এলাকার পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন দিতেন তিনি। নিজেকে পরিচয় দিতেন এসপি কিংবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এরপর ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে পাঠাতেন কোনো বিকাশের দোকানে। একটু কথাবার্তা বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পুলিশ কর্মকর্তাকে চলে যেতে বলতেন।
কিছুক্ষণ পর আবার ওই বিকাশের দোকানিকে ফোন দিয়ে টাকা পাঠাতে বলতেন। আগে একবার পুলিশের পোশাক পড়া লোক আসায় দোকানি বিশ্বাস করে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। এভাবে অভিযুক্ত যুবক প্রতারণা করে আসছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার সঙ্গে ৩ থেকে ৪ জন জড়িত বলে তিনি স্বীকার করেছেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রেপ্তার যুবক অন্তত ৩ বছর ধরে এরকম প্রতারণা করে আসছে। তিনি সহযোগীদের নিয়ে এরকম ঘটনা ৩০ থেকে ৩৫ বার ঘটিয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানী, রাজশাহী, পাবনা ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য, জালিয়াতি ও প্রতারণা পাঁচটি মামলা তদন্তাধীন এবং আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সবশেষ সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এমআর/এমএসএ