৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস কিনতে দীর্ঘ লাইন
মাত্র ৫৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। আর তা কিনতে সকাল থেকে বাজারের ব্যাগ হাতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। কেউ ১ কেজি, কেউ ১০ কেজি, কেউ আবার এরও বেশি পরিমাণ গরুর মাংস কিনছেন। ভেজাল বা আগের জমানো মাংস মেশানোর সুযোগ নেই। কারণ দোকানের সামনেই জবাই হচ্ছে গরু। সেখানেই যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দোকানে তোলা হচ্ছে। আর মুহূর্তের মধ্যেই আস্ত গরুর মাংস শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এটি রাজধানীর শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতানের সামনের চিত্র। স্থানীয়রা জানালেন, এমন অবস্থা প্রতিদিনের। তবে বিভিন্ন উৎসব ও ছুটির দিনগুলোতে মানুষের উপস্থিতিতে রীতিমতো বড়সড় জমায়েতে রূপ নেয়।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, উত্তর শাহজাহানপুরের খলিল ফার্নিচার গার্ডেনের পাশের ছোট দোকান ঘিরে মানুষের উপস্থিতি। পুরুষ-নারী পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক মানুষ। তার অপর পাশেই আরেকটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস। কমলা রঙের টিশার্ট পরে কাজ করছেন দোকানের কর্মচারীরা। গরু আনা, জবাই, চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটা, বিক্রয়সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা শ্রমিক কাজ করছেন। দোকানটির স্বত্বাধিকারী খলিল নিজে উপস্থিত থেকে যাবতীয় কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন। ক্রেতার চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা আর চরম ব্যস্ততার কারণে কথা বলার সুযোগও পাচ্ছেন না। একটি গরু জবাইয়ের পর শেষ না হতেই আবারো আনা হচ্ছে পাশেই খুঁটিতে বেঁধে রাখা গরু। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুসারে একের পর এক গরু জবাই করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
দোকানের কর্মচারী আখতার হোসেন বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫টির মতো গরু জবাই হচ্ছে। ডিসকাউন্ট দেওয়ার পর মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি। মাংসের সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ কোনো লিমিট নেই। ১ কেজি নেওয়ার জন্য কেউ এলেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১০০-১৫০ টাকার মাংস অনেকে নিয়ে থাকেন। এই কার্যক্রমের ফলে গরিব মানুষও মাংস খেতে পারছেন। আমরাও সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছি।
সপ্তাহব্যাপী অফারের আজ চতুর্থ দিন। স্বাভাবিক সময় ৮০০ টাকা কেজি দরে এ মাংস বিক্রি করা হয় বলেও জানান তিনি।
ব্যস্ততার জন্য বেশি কথা বলার সুযোগই পেলেন না খলিল গোস্ত বিতানের মালিক খলিল হোসেন। শুধু বললেন, সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। ব্যবসা কম করে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এই কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। যতক্ষণ সামর্থ্য হবে ততক্ষণ আমরা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
অপরদিকে স্বল্প দামে মাংস কিনতে পেরে খুশির কথা জানালেন ক্রেতারাও। ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকে মাংস কিনেছেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে অল্প দামে ভালো মাংস পাওয়া যাচ্ছে। বাইরে দামও বেশি আবার কোন মাংস দিচ্ছে সেটিও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এখানে আমাদের চোখের সামনেই গরু জবাই হচ্ছে সেই মাংসই সরাসরি কেটে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই নিশ্চিন্তে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছি। আমার মনে হয় ব্যবসায়ীরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করলে তারাই লাভবান হবেন। তাছাড়া এখানে মাংস সবাই নিতে পারছে। কোনো নির্ধারিত পরিমাপ নেই।
রুবাইয়া ইয়াসমিন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ভিড় একটু বেশি কিন্তু অরিজিনাল মাংস পাওয়া যাচ্ছে। আমি অধিকাংশ সময়ই এই জায়গা থেকে গরুর মাংস নেই। অন্যান্য বাজারগুলোতে ৭০০-৭৫০ টাকা দাম চাওয়া হয়। এখানে মাত্র ৫৯৫ টাকা। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য এটি উপযোগী। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় এরকম উদ্যোগ নিতে পারলে মানুষজন উপকৃত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরএইচটি/জেডএস