সাবেক শিল্প সচিবের মেয়ে ও জামাইয়ের ২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
প্রায় ২৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ১৩ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নুরুল আমিনের মেয়ে ও তার জামাইয়ের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (১২ নভেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রথম মামলায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিনের মেয়ে ও আসামি মিসেস ফারাহ শারমীনের বিরুদ্ধে দুদকে দাখিল করা ৮ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩৫ টাকার সম্পদের মধ্যে ২ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৫ কোটি ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিনের মেয়ের জামাই ও আসামি সৈয়দ এজাজ ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে দাখিলকৃত ২৮ কোটি ৮৭ লাখ ১ হাজার ৮৫২ টাকার সম্পদ বিবরণীতে ১০ কোটি ৭২ লাখ ২ হাজার ৫৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ২১ কোটি ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৭১১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্রের চোরাচালানের ঘটনায় দুই মামলায় চট্টগ্রামের একটি আদালতে রায় হয়। দুটি মামলার মধ্যে একটিতে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
চোরাচালানের মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৫২ আসামির মধ্যে ১৪ জনকে এই সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এই মামলায় একই সঙ্গে এদের পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। আর অস্ত্র আইনে করা মামলায় এই ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। এই মামলায় আসামি ছিলেন ৫০ জন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে জব্দ করা হয় ১০ ট্রাক ভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। সিআইডি পুলিশ দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে।
বাবর, নিজামী ও পরেশ বড়ুয়া ছাড়া ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিন, অস্ত্র বহনকারী ট্রলারের মালিক হাজি সোবহান, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান এবং অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ। এদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিন পলাতক।
আরএম/এসকেডি