নির্বাচনে শোডাউনটা কালচারে পরিণত হয়েছে : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমাদের নির্বাচনে শোডাউনটা কালচারে পরিণত হয়েছে। এই শোডাউনেই আচরণবিধি ভঙ্গসহ সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।
রোববার (১২ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি অ্যাপ অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান ও ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, শোডাউনে অনেক সময় সংঘাতও হতে পারে। কাজেই এটা সহজ করা হয়েছে। নমিনেশন তুলতে বাধা প্রদান যেমন করা হয়, তেমনি জমা দেওয়ার সময় চাপ প্রয়োগ করা হয় যে প্রত্যাহার করো। এই অনাচারগুলো অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে কমে আসতে পারে এবং টোটাল নির্বাচনী ব্যবস্থাটা আরও নির্ভরযোগ্য, আরও সহজ এবং আরও পরিশুদ্ধ হতে পারে।
সিইসি বলেন, প্রথম যে প্রযুক্তিটা আমরা ব্যবহার করতাম, সেটা হলো রেডিওতে খবর শুনতাম। এখন মোবাইলেও খবর শুনতে পাই। প্রযুক্তির যে পরিবর্তন গত ৫০-৬০ বছরে হয়েছে, এটি অবিস্মরণীয়। পরিবর্তন...প্রযুক্তি নির্ভর আমরা হচ্ছি। এই পরিবর্তন উন্নয়নকে যদি আমরা গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে আমরা পিছিয়ে যাব। আসলে ব্যবহারের মাধ্যমে প্রযুক্তিটা আয়ত্তে আসবে।
আরও পড়ুন
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ৯৭ কি ৯৮ সালে আমি কম্পিউটার ইউজ করি, তখন বিভিন্ন দেশ থেকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকেও প্রতিনিধিরা আসতেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক, যাতে তাদের কম্পিউটারগুলো কেনা হয়। সে ফাঁকে আমাদেরকে প্রযুক্তি শেখাচ্ছে— বলা হলো অনলাইন শপিং এবং ওনারা ইংরেজিতে বলছিলেন, অতটা ভালো বুঝতাম না। বুঝতে গিয়ে একটু ভুল বুঝে ফেলেছিলাম। ওরা বলল—অনলাইন শপিং, বলা হলো আপনার বাজারে যেতে হবে না। ওইটুকু বুঝেছি, যে আমি টাকা দেব শপিংটা আসবে। কিন্তু কোন ফাঁক দিয়ে, আমি দুই কেজি গরুর মাংস কিনব বা এক কেজি রসগোল্লা কিনব, বারবার চেষ্টা করছি কীভাবে এসে পৌঁছাবে! সিপিইউ দিয়ে ঢুকবে না প্রিন্টার দিয়ে ঢুকবে। প্রিন্টার দিয়ে তো কাগজ বের হয়। খুব চেষ্টা করেছি। আবার কাউকে জিজ্ঞেস করতেও লজ্জা পাচ্ছিলাম, যে আমি বুঝিনি। কিন্তু আমি কিছুতেই বের করতে পারলাম না, যে এই তারের ভেতর দিয়ে দুই কেজি মাংস কীভাবে আসবে। এটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে... আমার ভাইকেও বলছি এখন ইন্টারনেটে ইউলিটি বিল পে করছি। বিগত পাঁচ সাত বছর অনলাইন পেমেন্ট করছি। এটা খুবই স্বস্তিদায়ক এবং খুবই সহজ। এর আগে আমি আড়াই টাকা টেলিফোন দিতে গিয়ে পাঁচশ টাকা খরচ হতো যে দিয়ে আসবে তার। এগুলো কিন্তু আমাদের জীবনকে খুব সহজ করে দেয়।
তিনি বলেন, আজকে যে কথা বলা হচ্ছে নির্বাচন, এই যে পদ্ধতি যেটা প্রবর্তন করা হচ্ছে, এটা শুধু আমাদের তথ্য সরবরাহ সহজ ও দ্রুত করে দেবে তা নয়, স্বচ্ছতার ক্ষেত্রেও এটি খুবই সহায়ক হবে। অর্থাৎ দুই ঘণ্টা পরে কী পেলাম, চার ঘণ্টা পরে কী পেলাম, ছয় ঘণ্টা পরে কী পেলাম, হঠাৎ করে আকাশচুম্বী কিছু একটা হয়ে যায়, তখন কিন্তু বিশ্লেষণের একটা সুযোগ হবে। কাজেই এটা কিন্তু স্বচ্ছতার সৃষ্টি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সিইসি বলেন, আমাদের একটু কষ্ট করে শিখে নিতে হবে অ্যাপের মাধ্যমে কিভাবে বিভিন্ন তথ্যগুলো আমরা অবলোকন করব। আর অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়টা যেটা বলা হয়েছে, এটা কিন্তু বেশ কয়েকটি উপ-নির্বাচনে এটা আমরা করেছি। এটা অসম্ভব কিছু না। এটা ব্যবহারের মাধ্যমে সহজ হয়ে যাবে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। ভারতে এটা আছে। অনুকরণ করে আমরা আরও আধুনিক করেছি।
তিনি বলেন, অনলাইন ভোটিং, ঘরে বসে ভোট এটা বিশ্বের কোথাও হয়নি এখনো। তবে আমি ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাক্ষাতের সময় আমাকে জানিয়েছেন যে তারা এবিষয়ে চেষ্টা করছে। যাতে ঘরে বসে মোবাইলে অনলাইনে ভোট দিতে পারে। আমার বিশ্বাস ওটা হয়তো বাস্তবায়িত হবে। বাস্তবায়িত হলে আমরা হয়তো তখন বলতে পারবো যে এটা করা যায় কি না। কিন্তু তার আগে আমরা এখন কোনোরকম নিশ্চয়তা দিতে পারব না যে অনলাইন ভোটিং সিস্টেম কবে চালু হবে।
সিইসি বলেন, আমার বিশ্বাস অ্যাপটা নির্ভরযোগ্য হবে। অনলাইন নমিনেশন দলগুলো ব্যবহার করবেন। অ্যাপটা সাধারণে যদি অ্যাপটা ব্যবহার করে উপকৃত হবেন। অ্যাপল, অ্যান্ড্রয়েড যেকোনো ফোনেই এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
এসআর/এমএ