গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঘোষিত মজুরি বাতিল ও পুনর্বিবেচনার দাবি

গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে মজুরি পুনর্বিবেচনা এবং মজুরি কাঠামোয় মালিকদের সুবিধা দেওয়া ও শ্রমিকদের বঞ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত পরিবর্তনসমূহ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট।
বুধবার (৮ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, দেশের অধিকাংশ গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনসমূহ ৬৫ শতাংশ মূল মজুরি, মজুরি কাঠামোর ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেড বাদ দিয়ে ৭টি গ্রেডের স্থলে ৫টি গ্রেডে মজুরি কাঠামো ঘোষণা, শিক্ষানবিস পদ বিলুপ্ত করা, ১০ শতাংশ হারে বাৎসরিক মজুরি বৃদ্ধির সুবিধাসহ ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। কিন্তু সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামোয় শ্রমিকদের দাবির প্রতিফলন ঘটেনি। মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভায় গার্মেন্টস মালিক পক্ষের প্রতিনিধি সহকারী অপারেটর বা হেলপার পদের মজুরি মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রস্তাব করলে মজুরি বোর্ড বা সরকার মালিক পক্ষের প্রস্তাবিত মজুরিকেই চূড়ান্ত মজুরি হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের এই ভূমিকা প্রমাণ করে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে দরকষাকষি করে গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণের পরিবর্তে সরকার আর মজুরি বোর্ডের অন্যান্য প্রতিনিধিরা মালিকদের প্রস্তাবকে অনুমোদনের রাবারস্ট্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। মালিকদের প্রস্তাবিত মজুরিকেই চূড়ান্ত মজুরি হিসাবে ঘোষণা দিয়ে সরকার ও মজুরি বোর্ড মূলত মালিকদের পক্ষ নিয়েছে।
তারা বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে হেলপার হিসেবে কাজ করার জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। অথচ মজুরি কাঠামোয় শিক্ষানবিশ হিসেবে আলাদা পদ রাখার মাধ্যমে শ্রমিকদের দিনের পর দিন কম মজুরিতে কাজ করানোর সুযোগ অব্যাহত রাখার সুযোগ রাখা হলো। অপর দিকে শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্য কমানোর জন্য পূর্বের মজুরি কাঠামোর ৫ ও ৬ নং গ্রেড বিলুপ্ত করার দাবি জানালেও সেই দাবি না মেনে অভিজ্ঞতার কারণে যে গ্রেডসমুহের শ্রমিকদের উচ্চ বেতন পাওয়ার সুযোগ ছিল, সেই ১ ও ২ নং গ্রেড বাদ দিয়েও কিছু শ্রমিক-কর্মচারীকে মজুরি কাঠামেরা সুযোগ পাওয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। অর্থাৎ মজুরি কাঠামোয় গ্রেডের পরিবর্তনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা শ্রমিকের নয়, মালিকের স্বার্থ রক্ষা করেছে।সরকারের এই মজুরি ঘোষণা প্রমাণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা অগ্রগতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। আর দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে পেছনে ঠেলে দিয়ে এস.ডি.জি লক্ষ্য অর্জনে সফলতার বর্ণনা প্রতারণামূলক গল্প ছাড়া কিছু নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে তারা আরও বলেন, মালিকরা মজুরি বোর্ডে তামাশামূলক মজুরি প্রস্তাব দিয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে রাস্তায় নামাল। সরকার উসকানিদাতা মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিল না কিন্তু পুলিশকে দিয়ে গুলি করে রাসেল নামে একজন শ্রমিককে হত্যা করা হলো, ইমরান নামে একজন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেল, অসংখ্য শ্রমিককে গুলি করে আহত করা হলো। তারপরও শ্রমিকদের অভাবপূরণের জন্য প্রয়োজনের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে মালিকদের স্বার্থ রক্ষার মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে আর সেই মজুরি শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের ক্ষোভকে দমন করার পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে আয়ারা নামের একজন শ্রমিক নিহত হয়েছে। গুলি করে মামলা-হামলা দিয়ে দেশের প্রধান শিল্পের শ্রমিকদের অভাব থেকে সৃষ্ট ক্ষোভ দমন করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি বা শিল্পের সামগ্রিক উন্নতির আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয় বরং আধুনিক দাস ব্যবস্থার বিস্তার ঘটিয়ে লুটপাট আর অর্থপাচারের নীতির সমার্থক।
ওএফএ/এমএ