সন্ধ্যার পর রাজধানীতে দুই বাসে আগুন
বিএনপি-জামায়াতের টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথমদিন রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীতে পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই বাসেরই আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাংলামোটর মোড়ে শাহবাগগামী সড়কে পুলিশ বক্সের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ৬টা ২২ মিনিটে আমরা আগুনের তথ্য পাই। সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠাই। তারা ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুরে শিকড় পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুটি ঘটনায় প্রাথমিকভাবে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে আজ সকালে খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকায় অছিম পরিবহন নামে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মো. সবুজ (৩০) নামে এক গাড়িচালক দগ্ধ হন। তিনি রমজান পরিবহনের চালক ছিলেন।
আরও পড়ুন
এছাড়া দুপুরে উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় পুলিশের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহবুব আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। এর বাইরে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে অবরোধ সমর্থনকারীদের বিক্ষোভ-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে গতকাল শনিবার (৪ নভেম্বর) রাত থেকে আজ রোববার ভোর পর্যন্ত রাজধানীতে ৬টিসহ সারা দেশে ৯টি বাসে আগুন লাগার তথ্য পায় ফায়ার সার্ভিস। আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে এই সময়ে।
এর আগে গত সপ্তাহের শেষ তিন দিন (৩১ অক্টোবর-২ নভেম্বর) টানা অবরোধ পালন করে বিএনপি-জামায়াত। তার আগে ২৯ অক্টোবর হরতাল পালন করে তারা।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ। সেদিন দুপুরের দিকে বিএনপির সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে কাকরাইল মোড়ের কাছে আওয়ামী লীগের সমাবেশগামী লোকজনের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করার পর এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয় এবং বেশকিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উপস্থিত সাংবাদিকদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও উপুর্যুপরি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল করে দেয়। এর ফলে সংঘর্ষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়, পুলিশের বহু সদস্যকে পিটিয়ে আহত করা হয় এবং পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
সমাবেশ বানচালের প্রতিবাদে পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি হরতাল পালন করে। হরতালের দিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা ৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামায়াত। ওই কয়েকদিনে মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার অভিযান এখনো অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। সবশেষ গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেনকে। এছাড়া গত কয়েকদিনে সাবেক জাতীয় ফুটবলার আমিনুল হকসহ বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জেডএস