সমাবেশের অনুমতি দিলেও নানাভাবে বাধা আসছে : ইসলামী আন্দোলন
প্রশাসন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার লিখিত অনুমতি দিলেও নানাভাবে বাধা আসছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই।
তিনি বলেন, ৩ নভেম্বর মহাসমাবেশের প্রস্তুতি মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আমরা নানাভাবে বাধার মুখোমুখি হচ্ছি। অনেক বাস মালিক কর্তৃপক্ষ ও লঞ্চ মালিক সমিতি রিজার্ভের টাকা নিয়েও পরিবহন দিতে টালবাহানা করছেন। বিভিন্ন থানা পুলিশ নেতাকর্মীদের ঢাকায় না আসার জন্য হয়রানি করার মতো কাজ করছেন। ফোন করে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে আগামী ৩ নভেম্বর (শুক্রবার) মহাসমাবেশ করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
মহাসমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, আমরা সর্বকালের সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ করবো এবার। এজন্য সব বাধা উপেক্ষা করে মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নেওয়া হয়েছে।
তিনি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের কাজ হলো জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া। আমরা চাই এ রাষ্ট্রের জনগণকে ভোগান্তি হয়রানি নয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। জনগণের বন্ধু হোন কোনো দলের নয়। ভালো ব্যবহার করুন কোনো অবস্থাতেই একমুখী আচরণ করবেন না।
আগামীকালের মহাসমাবেশ কর্মসূচি থেকে আগামী দিনের কর্মসূচি কী হবে তা ঘোষণা করা হবে বলে তাও উল্লেখ করেন তিনি।
জাতির সামনে সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য তুলে ধরার অনুরোধ জানিয়ে শায়খে চরমোনাই বলেন, বর্তমানে দেশে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর রয়েছে বিরাট দায়িত্ব। সবচেয়ে কঠিন দায়িত্ব হচ্ছে সত্য উপস্থাপন করা। আপনারা (সাংবাদিকরা) যদি তা করতে ব্যর্থ হন তাহলে জাতি হোঁচট খাবে। সৃষ্টি হবে ভয়াবহ পরিস্থিতির। কোনো দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার পরিবর্তে এদেশের মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করি রাষ্ট্রকে সমুন্নত করি। রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণের জন্যই আমরা সবাই কাজ করি।
সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের শঙ্কা কাজ করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কিছু জায়গায় আমাদের নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছিল। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ফোন করে হুমকি ধামকি অব্যাহত রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মহাসমাবেশ সমাপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো শঙ্কা থেকে মুক্ত নই।
কত লোকের জনসমাগম হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো অনুমান করে বলা যায় না। তবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ করা সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। এই মহাসমাবেশ শুধু দলের নয় জনগণের জন্য।
যত জনগণ এখানে উপস্থিত হবে তত বেশি এই নাজুক পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্তির পথ পাবো। সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে আগামীকালের মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী দিনের কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, দিনে দিনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কেও আমরা সঠিক জানি না। তাই আগামীকালের মহাসমাবেশের আগে পর্যন্ত নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু বলছি না।
ফজরের পরই আমাদের নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশ স্থলে আসা শুরু করবে। শৃঙ্খলায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলবো, এই কর্মসূচিকে ঘিরে যেন সাংবাদিকসহ কোনো সাধারণ মানুষ আমলা সহিংসতা ভোগান্তি বা হয়রানি শিকার না হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাকী ও মিডিয়া সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম কবির।
জেইউ/জেডএস