বাবা চেনেন না তার ৭ বছরের কন্যাশিশুকে!
চট্টগ্রাম সংবাদ সম্মেলন করেছে মীম রহমান নামে সাত বছরের এক কন্যাশিশু। এতে সে অভিযোগ করে, তার বাবা আছেন কিন্তু তিনি তাকে স্বীকার করছেন না। দেখা হলেও কথা বলছেন না। চেনেও না চেনার ভান করছেন।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় ভুক্তভোগী শিশুটির মা টিনা রিবারো ওরফে লিন্ডা রিবারো টিনা উপস্থিত ছিলেন। মা-মেয়ের কান্নাজড়িত বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বক্তব্যে টিনা রিবারো বলেন, আমি জন্মসূত্রে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ছিলাম। ২০০৮ সালে মাকসুদুর রহমান ওরফে নাইম রহমানের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি কোতোয়ালি থানার বান্ডেল রোড এলাকার মাহবুবুর রহমানের ছেলে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে ২০১৪ সালে পরিবার-পরিজন ছেড়ে আমি তার সঙ্গে চলে যাই। ওই সময় নাইম আমাকে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে একজন মাওলানা ডেকে প্রথমে তিনি আমাকে ধর্মান্তরিত করেন। আমি কালেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। এরপর মাওলানা সাহেব আমাদের বিয়ে পড়ান। ওই সময় আমার কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে কি রকম কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে সেটা আমি জানতাম না। নাইম বলে আমাদের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এরপর আমরা সংসার জীবন শুরু করি। আমাদের একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। নাইম আগে থেকে আইপিএসের ব্যবসা করতেন। বিয়ের কিছুদিন পর তার দোকান আগুনে পুড়ে যায়। এরপর থেকে নাইম আমার কাছে বিভিন্ন কৌশলে টাকা দাবি করতেন। আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলতেন। নানা সময়ে আমি গহনা বিক্রি করে অথবা আমার বাবার বাড়ি থেকে এনে টাকা-পয়সা নাইমকে দিয়েছি। কিন্তু তার টাকা দাবি বন্ধ না হওয়ায় আমি একপর্যায়ে তাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিই। এ নিয়ে টানাপড়েনের জেরে ২০১৯ সালের নাঈম আমাদের ফেলে চলে যান। তিনি আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করছেন না। আমি তার পরিবার-পরিজন সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুবিচার পাইনি।
আরও পড়ুন
‘এখন নাইম বলছে সে আমাকে বিয়ে করেনি। তার কোনো সন্তান নেই। আমাদের বিয়ের সময় নাকি কোনো কাবিন করা হয়নি। অর্থাৎ সে আমার সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা করে সংসার করেছে। এ নিয়ে কয়েক বছর আগে আমি একটি মামলাও করেছি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তা তার কাবিন রেজিস্ট্রি না থাকাসহ নানা বিষয় উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। যদিও প্রভাবশালী হওয়ায় সে মামলায় তিনি আগেভাগে জামিন নিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে আদালত অঙ্গনে আমি বিচারের আশায় দিনের পর দিন ঘুরছি।’
টিনা রিবারো বলেন, আমার এই অবুঝ মেয়েটি কি অপরাধ করেছে? জন্মদাতা বাবা তাকে অস্বীকার করছে। সে কার পরিচয় এই পৃথিবীতে বেড়ে উঠবে? সে যখন আরেকটু বড় হবে তার বাবা কে বললে আমি কি জবাব দেব? বর্তমান যুগ প্রযুক্তির। আমি আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ টেস্ট করার আবেদন করছি। এতে প্রমাণিত হবে এ কন্যাসন্তানের বাবা কে? আমি এখনো তার সঙ্গে সংসার করতে ইচ্ছুক। সে তার কন্যাসন্তানকে মেনে নিক। সে আমাকে স্ত্রী বলে স্বীকৃতি দিক। যদি সে এটা না করে তাহলে সে আমার সঙ্গে যে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করেছে তার জন্য উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে শিশু মীম রহমান বলে, আমার বাবার সঙ্গে আমার দেখা হয়। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেন না। আমাকে চেনেন না। আমি আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত নাইম রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমার কাছ থেকে কিছু টাকা নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এমআর/এসএসএইচ