কথা রাখলেন এনায়েত উল্যাহ, চলছে এনা পরিবহন
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিনদিনের অবরোধের তৃতীয় ও শেষ দিন আজ। যাত্রী সংকট ও ভাঙচুর আতঙ্কে গত দুইদিনের মতো আজও (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের পরিবহন যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। তবে এতকিছুর মধ্যেও কথা রেখেছেন পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। অবরোধে বাস চলাচল সচল রাখার ঘোষণা দেওয়ার পর অন্যান্য পরিবহন প্রায় বন্ধ থাকলেও সড়কে চলছে তার মালিকানাধীন এনা পরিবহন।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে গিয়ে যাত্রী নিয়ে এনা বাসকে চলাচল করতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন জেলাগামী পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রী সংকটে বাস ছাড়তে পারছেন না তারা। তবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরপর চলছে এনা পরিবহনের কিছু বাস।
আরও পড়ুন
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাভাবিক দিনগুলোতে যেখানে সকালের দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের বিশাল চাপ দেখা থাকে, সেখানে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে যেন অনেকটাই থমকে গেছে রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ টার্মিনালটি। এনা পরিবহন ছাড়া অন্যান্য কাউন্টারগুলোতে টিকিট মাস্টার বসে থাকলেও নেই কোনো যাত্রী। তবে এনা পরিবহনের কাউন্টারে দেখা মিলেছে কিছু যাত্রীর।
ময়মনসিংহগামী রাসেল মিয়া নামের এক যাত্রী বলেন, বাসা থেকে অনেকটা সন্দেহ নিয়েই বের হয়েছি যে, বাস পাই কি না! তবে এখানে আসার পর শুনলাম শুধুমাত্র এনা পরিবহনের বাস চলছে। তবে যতক্ষণ পর্যাপ্ত যাত্রী না হয়, ততক্ষণ বসে থাকতে হবে বলেছে।
তিনি বলেন, এক ঘণ্টা বসে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই, তারপরও যেতে পারলেই খুশি। এখন ভয়ে আছি রাস্তায় আবার কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে হয় কি না।
এনা পরিবহনের মহাখালী বাস টার্মিনাল কাউন্টার ম্যানেজার (অ্যাকাউন্টস) দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিনের সূচি অনুযায়ী আমাদের বাসগুলো ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। তবে বাস ছাড়তে কিছুটা সময় লাগছে৷ অবরোধের প্রথম দিন থেকেই আমরা বাস চালাচ্ছি, এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, যাত্রী সংখ্যা অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেকটাই কম। আগে আমাদের ১০ মিনিট পরপর এক একটি বাস ছাড়া হতো, কিন্তু এখন এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর ছাড়তে হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং যেখানেই সমস্যা হবে তাদের জানাতে বলা হয়েছে। সে কারণে আমরা তেমন কোনো ভয় দেখছি না।
এর আগে, সোমবার (৩০ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে অবরোধেও বাস চলাচল সচল রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তবে অবরোধের প্রথম দিনে সড়কে এনা পরিবহনের কোনো বাস চলতে দেখা যায়নি। বরং অন্যান্য বাসের সঙ্গে এনায়েত উল্যাহর এনা পরিবহনের অসংখ্য বাস মহাখালী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে এনায়েত উল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এনা পরিবহনের ম্যানেজার আবু সুফিয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবরোধের প্রথম দিন থেকেই আমাদের বাস সড়কে ছিল। তবে প্রথম দিন অবরোধ নিয়ে যাত্রীদের মনে আতঙ্কের কারণে যাত্রী সংখ্যা খুবই কম ছিল। যে কারণে প্রথম দিন সড়কে আমাদের বাসও কম ছিল। তৃতীয় দিনে এসেও আমরা অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় যাত্রী কম পাচ্ছি। তবে ঢাকা থেকে সব রুটেই আমাদের বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো গাড়ি অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়েনি। আমরা সবসময় আমাদের ড্রাইভার ও সুপারভাইজারসহ স্টাফদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেই। এমনকি তাদের সাথে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সড়কে সামনের কোনো গাড়িতে যদি সমস্যা হয়, আমরা পেছনের গাড়িগুলোকে বলে দিচ্ছি যেন তারা সাবধানে সামনে অগ্রসর হয়। প্রশাসনও আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
প্রসঙ্গত, শনিবারের (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ পণ্ড এবং সেখানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রোববার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল পালিত হয়েছে। এরপর রোববার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ৩১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এরপর সোমবার (৩০ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে সারা দেশে তিন দিনের (৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
টিআই/কেএ