সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে ছাড় দেবে না পুলিশ
আগামীকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ ও নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে বিএনপি সমাবেশ করবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ২০ শর্তে দুই দলকেই সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বিন্দুমাত্র দেবে না পুলিশ। ইতোমধ্যে ডিএমপির সকল কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ডিএমপির সদরদপ্তরে দুইটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম বৈঠকটি ডিএমপি কমিশনার করেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মর্যাদার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এই বৈঠক ডিএমপির বেশ কয়েকটি থানার অফিসার ইনচার্জও (ওসি) ছিলেন। প্রথম বৈঠক বিকেলে শুরু হয়ে সন্ধ্যার দিকে শেষ হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় বৈঠক শুরু হয় সন্ধ্যার দিকে। দ্বিতীয় বৈঠক ছিলেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার থেকে শুরু করে অতিরিক্ত কমিশনাররা। দুইটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে এবং পরিস্থিতি অবনতি হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বৈঠকে আলোচনা হয় জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে। বৈঠকে কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া জামায়াতে যেন কোনোভাবে মাঠে না নামতে পারে। তারপরও যদি তারা নামে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আর বিএনপির বিষয়ে বৈঠক আলোচনা হয় যে, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে পুলিশ তাদের রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। আর তারা যদি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে অ্যাকশনে যাবে পুলিশ।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকের বৈঠকে আগামীকালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। আজ রাত থেকে পুলিশ মোতায়েন হয়ে যাবে বিভিন্ন জায়গায়। সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে ঢাকায় আগামীকালের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে।
আগামীকালের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি এর আগে যেভাবে সমাবেশ করেছে এবারও সেভাবে করলে সব পুলিশ তার রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। তবে বিএনপির সমাবেশ থেকে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয় তাহলে পুলিশ ছাড় দেবে না। স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে। আর জামায়াতকে কোনোভাবে সমাবেশ করতে বা মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। তারপরেও যদি তারা নামে তাহলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড.খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কাছে আমরা সাতটি বিষয় জানতে চেয়েছিলাম। দলের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চিঠিতে তারা যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে আশা করব সেগুলো তারা অনুসরণ করবে। দুই দলই নিশ্চিত করেছে তাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আমরা নিরাপত্তা দিতে চাই ঢাকাবাসীর। আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সহযোগিতা করবে।
দুই দলকে ২০টি শর্ত দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, শর্ত না থাকলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা হতে পারে। শর্তগুলো স্বাভাবিক। কী কী করা যাবে, সমাবেশে কখন আসবে, কখন আসবে না সবকিছুই শর্তে বলা আছে।
বিএনপির সমাবেশে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির বক্তব্য প্রচার করা যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে শর্তগুলো দেওয়া আছে সবগুলো আইনি কাঠামোর মধ্যে দেওয়া আছে।
জামায়াতকে অনুমতি দেওয়া হয়নি, এরপরও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি, এ বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কিন্তু লিগ্যাল ফ্রেমে আছে। আমরা বৈধ আইনি কাঠামোর জায়গায় আছি। প্রত্যেকের উচিত রাষ্ট্রের যে প্রচলিত আইন আছে তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।
এমএসি/এসকেডি