তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবসা-পর্যটনে বড় ভূমিকা রাখবে : বিমান সচিব
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, এ টার্মিনালের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যাত্রীসেবায় যোগ করবে নতুন মাত্রা। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো হিসেবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে নতুন এ টার্মিনাল।
শনিবার (৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন
বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের এক ও দুই নম্বর টার্মিনালের বর্তমান কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে তিন লাখ ৫০ হাজার টন। এর সঙ্গে যদি নবনির্মিত কার্গো টার্মিনাল যুক্ত হয় তাহলে আমদানি ও রপ্তানির সক্ষমতা আট লাখ টনে গিয়ে দাঁড়াবে। এর মাধ্যমে জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ বাস্তবে রূপদান সহজ হবে।
মোকাম্মেল হোসেন বলেন, আজ আমাদের জন্য গর্বের দিন, অ্যাভিয়েশন খাতের জন্য আনন্দের দিন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক টার্মিনাল স্থাপনের এ আনন্দঘন মুহূর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তিনিই বাংলার মানুষকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলার সাহস জুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল ও সমৃদ্ধ এক সোনার বাংলা গড়ে তোলা। এজন্য তিনি সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ সময়ের মধ্যে তিনি দেশের অগ্রগতির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত গড়ে দিয়েছিলেন।
‘আঠারো শতকে নৌ-বন্দর, উনিশ শতকে রেলপথ, বিশ শতকে মহাসড়কের যে ভূমিকা, একুশ শতকে সেই ভূমিকায় এসে অবতীর্ণ হয়েছে বিমানবন্দর। উন্নত বিমানবন্দরের অবকাঠামোই স্বল্প সময়ে মানুষের যাতায়াত নিশ্চিত করতে পারে। এ কারণে বিমানবন্দর ঘিরে গড়ে উঠছে মেট্রোপলিটন ব্যবসায়িক চাঞ্চল্য।’
বিমান সচিব আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। এতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের আয়তন আড়াই গুণ বৃদ্ধি পাবে। বছরে যাত্রী পরিবহন ক্যাপাসিটি আরও ১২ মিলিয়ন বাড়বে। অর্থাৎ বর্তমানের আট মিলিয়নের সঙ্গে ১২ মিলিয়ন যুক্ত হয়ে যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বেড়ে ২০ মিলিয়নে দাঁড়াবে।
সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের শ্রেষ্ঠ সময়— বলেন মোকাম্মেল হোসেন।
জানা গেছে, পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। এতে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এসকেলেটর।
নতুন এ টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাগের জন্য সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ও ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মতো অত্যাধুনিক তিনটি আলাদা স্টোরেজ এরিয়া করা হয়েছে। রেগুলার ব্যাগেজ স্টোরেজ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড এবং অড সাইজ (অতিরিক্ত ওজনের) ব্যাগেজ স্টোরেজ। যাত্রীদের স্বাভাবিক ওজনের ব্যাগেজের ১৬টি রেগুলার ব্যাগেজ বেল্ট থাকবে টার্মিনালটিতে। অতিরিক্ত ওজনের (ওড সাইজ) ব্যাগেজের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আরও চারটি পৃথক বেল্ট।
অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ভবনে থাকবে ১০টি সেলফ চেক-ইন কিওস্ক (মেশিন)। এগুলোতে নিজের পাসপোর্ট এবং টিকিটের তথ্য প্রবেশ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে বোর্ডিং পাস ও সিট নম্বর। এরপর নির্ধারিত জায়গায় যাত্রী তার লাগেজ রেখে দেবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাগেজগুলো এয়ারক্রাফটের নির্ধারিত স্থানে চলে যাবে। তবে নির্ধারিত ৩০ কেজির বেশি ওজনের ব্যাগেজ নিয়ে এখানে চেক-ইন করা যাবে না। সেসব যাত্রীদের জন্য আরও ১০০টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে এ টার্মিনালে।
টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। এছাড়াও টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
টিআই/