জ্বালানি তেলের ডিলারদের কমিশন বেড়েছে, ভোক্তা কী পেল?
দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি তেলের ডিলার পর্যায়ে কমিশন বৃদ্ধি ও তেলের মূল্য সমন্বয় করেছে সরকার। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সমন্বয় কার্যকর করেছে।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডিলার বা এজেন্ট পর্যায়ে কমিশন নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। গেজেটে জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্নির্ধারণ/সমন্বয়ের (বৃদ্ধি/হাস) ক্ষেত্রে অবচয় এবং সব খরচসহ ডিলার/এজেন্টস্ কমিশন এবং ট্যাংকলরির ভাড়াসহ অকটেনে ৪.২৮ শতাংশ, পেট্রোলে ৪.৩৪ শতাংশ, কেরোসিনে ২ শতাংশ ও ডিজেলে ২.৮৫ শতাংশ কমিশন নির্ধারণ করে সরকার।
মূল্য সমন্বয়ের আগে ডিলার পর্যায়ে ডিজেলের মূল্য ছিল ৮৮ টাকা ২১ পয়সা, যা বর্তমানে নির্ধারিত হয়েছে ১০১ টাকা ৪৪ পয়সা। কেরোসিনের মূল্য ছিল ৮৮ টাকা ৯৭ পয়সা, যা নির্ধারিত হয়েছে ১০২ টাকা ৩১ পয়সায়।
এছাড়া অকটেনের দাম ১০৪ টাকা ২ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা ৬২ পয়সা, পেট্রোলের দাম ৯৯ টাকা ৮৮ পয়সা থেকে ১১৪ টাকা ৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু এ মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যমে ভোক্তাপর্যায়ে জ্বালানি তেলের দামের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ভোক্তাপর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম যথারীতি পূর্বের মতোই রয়েছে।
ভোক্তাপর্যায়ে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হলেও, ডিলার পর্যায়ে সে হারে কমিশন বৃদ্ধি করা হয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোল পাম্প মালিকরা দাবি করেন, তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন। ফলে ডিলার পর্যায়েও তেলের কমিশন বৃদ্ধির দাবি তোলেন তারা।
এ বিষয়ে বারবার মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিলেও কোনো সুরাহা মেলেনি। ফলে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তেল উত্তোলন,পরিবহন ও পেট্রোলপাম্পে তেল সরবরাহ বন্ধ করে পেট্রোলপাম্প মালিক সমিতি। তাদের দাবি ছিল, জ্বালানি তেল বিক্রয় কমিশন ৭.৫০% নির্ধারণ করা, পেট্রোল পাম্পের ব্যবসায়ীদের এজেন্ট কমিশন গেজেট আকারে প্রকাশ করা, ট্যাংকলরি ভাড়ার ওপর ভ্যাট সংযুক্ত নয়, এবিষয়ে সু-স্পষ্ট গেজেট প্রকাশ করা ও ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে ট্যাংকলরির ইকোনমিক লাইফের জন্য পৃথকভাবে সু-স্পষ্ট গেজেট প্রকাশ করা।
সেসময় বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেছিলেন, আমাদের দাবিগুলো পুরোনো। জ্বালানি তেলের দাম যখন ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়, তখন আমাদের কমিশন কমিয়ে দেওয়া হলো।তেলের দাম যদি বাড়ানোই হয়, তাহলে আমাদের কমিশনও বাড়াক। বাস্তবতা হলো আমাদের ইনভেস্টমেন্ট বেড়ে গেছে। সুতরাং আমাদের কমিশনও বাড়াতে হবে।
এরপর মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে মালিক সমিতির একাংশ তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দাবিদাওয়া সমূহ গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করে।
যা বলছে মালিক সমিতি
প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে পেট্রোলপাম্প মালিক সমিতির মহাসচিব মিজানুর রহমান রতন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূল্য সমন্বয় করে গ্যাজেট প্রকাশ করেছে, এ জন্য সরকারকে অভিনন্দন। তবে আমরা যতো শতাংশ কমিশন চেয়েছিলাম, ততো শতাংশ কার্যকর হয়নি। যেমন অকটেনে আমরা ৭০ পয়সা কমিশন চেয়েছিলাম, সেখানে ৫৭ পয়সা কমিশন দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না। আন্দোলনের ভিত্তিতে সরকার যা সিদ্ধান্ত দিয়েছে, আমরা সেটাই মেনে নিচ্ছি।পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে না পারলেও সরকারি সিদ্ধান্তে আমাদের আপত্তি নেই।
ব্যবসায়ীবান্ধব সরকার বলেই এমন সিদ্ধান্ত : ক্যাব
মূল্য সমন্বয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজের হোসেইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা আন্দোলন করেছে, ধর্মঘট করেছে, তাই তাদের দাবি মেনে নিয়েছে। অথচ ভোক্তারা যে দিনের পর দিন একটা সহনশীল বাজার ব্যবস্থাপনার দাবি জানাচ্ছে, তার তো প্রতিফলন নেই। রেগুলেটরির দায়িত্বে যারা আছে, তাদের উচিত এ বিষয়টি আমলে নেওয়া।
ওএফএ/এসএম