চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই : আইনমন্ত্রী
চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে সেটা খোলার আর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
রোববার (১ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রীর নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আইনের ৪০১ ধারার কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আর আইনে থাকে না। ঠিক সেই ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ব্যাখ্যা করে আমরা আমাদের মতামত পাঠিয়ে দিয়েছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানে আমরা মতামত দিয়েছি, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে সেটা পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ ট্রানজেকশন, এটা খোলার আর কোনো উপায় নেই।
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার পরিবার যদি এর পরও তাকে বিদেশ পাঠাতে চায় তাহলে কী প্রক্রিয়ায় যেতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তাকে এখন যে আদেশ বলে ৪০১ ধারায় দুটি শর্তে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা বাতিল করে পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।
তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে যাওয়ার বিষয়টি সবসময় আছে। তবে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বলছি আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন সরকার প্রয়োগ করে তখন সেটাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্ত আছে। সেক্ষেত্রে তারা হয়তো যদি প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা হলো এরকম, এখন যে আদেশ আছে সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয় তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারবেন।
এই অবস্থায় তিনি আদালতে যেতে পারবেন এমন কোনো সুযোগ নেই। তাহলে কি আদেশ বাতিল করা হবে? জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, বাতিল করা অমানবিক হবে। বাতিল করব না।
২৪ সেপ্টেম্বর আদেশ জারি করলেন তার কয়েকদিন না যেতে আবার এবিষয়টি নিয়ে তারা আবেদন করলো, এটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো আলাপ আলোচনা হয়নি।
আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনি মতামতের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার ভাইয়ের যে সর্বশেষ দরখাস্তটা, সেখানে বলা হয়েছে তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং তাকে বিদেশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়া। সে বিষয়ে আইনি মতামতের জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
আপনাদের প্রশ্ন হলো, প্রথম কথা হলো প্রথম যে দরখাস্তটা ছিলো ২০২০ সালের মার্চ মাসে নিষ্পত্তি হয়। সেখানে বলা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই দরখাস্তের ওপর আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটা হলো দুটি শর্তসাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো। এটা ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার উপধারা ১ এর ক্ষমতা বলে। সেখানে যে দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- প্রথমত তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। দ্বিতীয়ত তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। সেই শর্ত মেনে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং বাসায় যান। সেভাবেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়।
তিনি বলেন, নিষ্পত্তি করার পর দরখাস্তের মধ্যে এইটুকু জিনিস উন্মুক্ত ছিল সেটা হলো, তাকে দেওয়া হয়েছিল ছয়মাসের জন্য এবং প্রত্যেক ছয় মাসে বাড়ানো যাবে কি না সে ব্যাপার ছিল। প্রত্যেক ছয় মাসে এটা বাড়িয়ে ছিল, আটবার বাড়ানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার কোন দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়। সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আইনে থাকে না।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে চিঠি দেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
এমএম/এসএম