করোনাকালেও পানি নেই দুই সপ্তাহ, পাত্তা নেই ওয়াসার
চলছে করোনাকাল। করোনা সংক্রমণ রোধে আছে সরকার আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ। এ সময় মাস্ক পরিধান এবং বারবার হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বারবার হাত ধোব কীভাবে? বাসায় তো পানিই নেই। খাওয়া বা টয়লেটে ব্যবহারের জন্যও ঠিক মতো পানি পাইনি, বারবার হাত ধোয়া তো দূরের কথা!
কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মিজানুর রহমান। তার বাসায় গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ওয়াসার পানির সাপ্লাই নেই। তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি বাড্ডা এলাকায় দুই সপ্তাহ ধরে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে রান্না-খাওয়া, গোসলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন কাজ করতে ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
লাইনের সমস্যার সমাধানে পাত্তা নেই ওয়াসার। উপায় না দেখে ওয়াসার পানি সরবরাহের গাড়ি থেকে বাসা মালিকরা বাধ্য হয়ে পানি কিনে নিচ্ছেন। কেনা পানির সরবরাহও নিয়মিত পাচ্ছেন না তারা। সব মিলিয়ে এই করোনাকালে পানিহীন কঠিন সময় কাটাতে হচ্ছে বাড্ডার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। পানি সরবরাহ থেকে শুরু করে ওয়াসার বিরুদ্ধে এর সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের শেষ নেই। গরমকালে পানির সংকট যেন এই এলাকাবাসীদের হাঁপিয়ে তুলেছে। দিন দিন বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট চরম আকার ধারণ করছে।
রাজধানী বাড্ডার একটি বাড়ির মালিক রাজু আহমেদ বলেন, আমাদের বাসায় ওয়াসার পানি সরবরাহ নেই গত দুই সপ্তাহ ধরে। বারবার ওয়াসার সঙ্গে এলাকার সব বাসা মালিকরা মিলে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সমাধান দিতে পারেনি এখনও। বাধ্য হয়ে আমরা ওয়াসার পানি সরবরাহের গাড়ি থেকে পানি কিনে নিচ্ছি। তাও আবার পানির জন্য অর্ডার দিলেও সময়মতো পানির গাড়ি আসে না। দীর্ঘ সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া এক গাড়ি পানির দাম ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও সুযোগ বুঝে তার বেশি টাকা দাবি করে। এদিকে সব ভাড়াটিয়ারাও পানির জন্য অস্থির হয়ে যান। পানি ছাড়া কি বসবাস করা যায়? তার মধ্যে এখন চলছে করোনাকাল।
এই এলাকারই একটি পাঁচ তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন মকলেছুর রহমান নামের এক ভাড়াটিয়া। তিনি বলেন, সারাদিন অফিস শেষ করে যখন বাসায় এসে দেখি পানি নেই তখন এরচেয়ে বড় সমস্যা আর কিছু থাকে না। আজ প্রায় ১৪ দিন ধরে এই এলাকায় পানির সমস্যা। ওয়াসার গাড়ির পানি বাসা মালিক কিনলেও তা সব সময় পাওয়া যায় না। বেশ কিছু দিন ধরে ঠিকমতো আমরা গোসল করতে পারি না, রান্না হয় না। দূরের কোনো বাড়িতে পানি আছে এমন সন্ধান পেলে মাঝে মাঝে ভিক্ষুকের মতো চেয়ে এক বালতি পানি নিয়ে আসি। পানি ছাড়া চলা যায়? ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই।
এ বিষয়ে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ ওয়াসার মডস জোন-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড্ডা এলাকায় এমন সমস্যা হয়েছিল তা আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। আমরা ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় এ সমস্যা সমাধান করে ফেলেছি। আর যেসব এলাকায় এখনও সমস্যা আছে সেখানেও আমরা খুব দ্রুত সমাধান করার জন্য কাজ করছি। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে। গরমকালে পানির লেয়ার নিচে নেমে যায়, এ সময় আমরা পাইপ যুক্ত করতে পারলে ঠিক হয়ে যাবে।
তাহলে এই সমস্যার এত দিন ধরে সমাধান করা যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ হলো আমি এখানে যোগদান করেছি, আগে মিরপুরে ছিলাম। আমার কাছেও অনেক বাসা মালিকার এসে ইতোমধ্যে অভিযোগ জানিয়েছেন। আমাদের কাজ চলছে, কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আশা করছি আগামী কিছু দিনের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
শুধু বাড্ডা এলাকা নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেই পানির এমন সমস্যার অভিযোগ রয়েছে রাজধানীবাসীর। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সাধারণ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে মুঠোফোনে বলেন, রাজধানীর শনির আখড়া, জিয়া সরণি, পূর্ব জুরাইনসহ আশপাশের এলাকায় পানির জন্য হাহাকার। করোনাকালে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে নাগরিকরা পানি সংকটে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে। ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝেমাঝে যাও পানি আসে তা দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি। এই পানি ব্যবহারের ফলে বাড়ছে চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগব্যাধি।
তিনি বলেন, পানি ছাড়া জীবন যাপন একেবারেই অসম্ভব। ওয়াসার পানি না পেয়ে প্রতিটি মানুষ খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। আমরা বারবার ওয়াসার কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনো ফল পাচ্ছি না। করোনাকালে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে পানি নেই এই কথা চিন্তাও করা যায় না। আমরা ঠিকমতো পানি পাই না। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান ওয়াসা যেন বের করে এ বিষয়ে ওয়াসার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ও আসন্ন রমজান মাসে ঢাকা মহানগরীতে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে ওয়াসার মডস জোনগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১০টি অ্যাডভাইজারি ও মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে গত ৪ এপ্রিল। ঢাকা ওয়াসার সচিব (আ. দ.) প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এই অ্যাডভাইজারি ও মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এই অ্যাডভাইজারি ও মনিটরিং টিম কোভিড সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ও আসন্ন রমজান মাসে ঢাকা মহানগরীতে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে ওয়াসার মডস জোনগুলোর কার্যক্রম তদারকি করবে।
এএসএস/এইচকে