বাবা ও শাশুড়ির নামে সম্পদ গড়েও পার পেলেন না রেজিস্ট্রার
দুর্নীতির টাকায় শাশুড়ির নামে ফ্ল্যাট ও নিজের বাবার নামে জমি ক্রয় করে আইনের মারপ্যাঁচে আবার নিজের নামে দলিল করেও শেষ রক্ষা হয়নি গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তার অপকৌশল ধরা পড়েছে। শাশুড়ি ও পিতার নামে গড়া ওই সম্পদের উৎসের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় দুদকের মামলার আসামি হয়েছেন তিনি।
দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ঢাকা ১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
আসামি গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুদকের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি অহিদুল ইসলাম ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে সমাজকল্যাণ বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ২০০৪ সালের ৩ মার্চ বোরহানুদ্দীন কলেজের চাকরি থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন পরিদপ্তরে সাব-রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি পদোন্নতির মাধ্যমে জেলা রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। আর ২০২০ সালের ১ জুলাই গাজীপুর জেলায় বদলি হয়ে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন।
আসামি অহিদুল ইসলাম ২০০৫ সালে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী খুজিস্তা আক্তারা বানু বিসিএস ১৬তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। বর্তমানে ঢাকার বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।
মামলার এজহারে আরও বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি হলে তিনি ২০২১ সালের আগস্টে তা জমা দেন। সেখানে তিনি ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদর্শন করেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩ টাকার স্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করলেও ওই সম্পদ তার আয় হতে ক্রয়কৃত নয় বলে জানান।
তার দেওয়া বক্তব্য এবং আয়কর নথির তথ্য মতে ১৯৯৫ সাল হতে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বেসরকারি ও সরকারি চাকরির বেতন ভাতা, পিতা মাতার নিকট হতে দানমূলে প্রাপ্ত জমির আয়, গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে প্রাপ্ত রয়ালটি, গৃহ সম্পত্তির আয়, জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ, শেয়ার ব্যবসার আয় এবং এফডিআর/সঞ্চয়পত্রের মুনাফার প্রাপ্ত অর্থসহ সর্বমোট ২ কোটি ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা আয়ের উৎস প্রদর্শন করেছেন।
সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, তিনি তার নিজ অর্থ দ্বারা তার শাশুড়ির নামে ৩০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট এবং তার পিতার নামে ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার -টাকার জমি ক্রয় করে নিজ ও সন্তানের নামে স্থানান্তর করেছেন। সব মিলিয়ে আসামির নামে ২ কোটি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকার বৈধ উৎস পাওয়া যায়। কিন্তু ১ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৯ টাকার কোনো বৈধ উৎস মেলেনি।
দুদকের অনুসন্ধান বলছে, আসামির শাশুড়ি ৩০ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেই ৭ মাস পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি অহিদুল ইসলামের নাবালক পুত্র অয়নের নামে হেবা ঘোষণা দলিল মূলে দান করেন। অথচ অহিদুল ইসলামের শাশুড়ির উক্ত ফ্ল্যাট ক্রয়ের মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না। অবৈধ সম্পদ লুকাতে আসামি এমন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়।
অবৈধ সম্পদ লুকাতে একইভাবে নিজের বাবাকে ব্যবহার করেছেন আসামি অহিদুল। বাবা আনছার উদ্দিন ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ১৬৪.৫৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে তা পরবর্তীতে অপর তিন পুত্র ও কন্যাকে না দিয়ে শুধু আসামির নামে হেবা ঘোষণা দলিল মূলে দান করেন।
আরএম/এসকেডি