এক রাতেই এলোমেলো সব, অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই হলেন লাশ
অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ অনিক। গতকাল রাতে বৃষ্টি শুরু হলে মিরপুরে কমার্স কলেজ–সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে একটি দোকানের সামনে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
ভারী বৃষ্টির কারণে সেখানকার রাস্তা তলিয়ে যায়। তবে পানি ঠেলেই পথচারারীরা গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে রাস্তার পানিতে পড়ে যান চারজন। তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে যান অনিক। তিনি হয়তো বুঝতেই পারেননি যারা পড়ে গেছেন তারা বিদ্যুতায়িত হয়েছেন। যারা পড়ে গেছেন তাদের তুলতে গিয়ে নিজেও বিদ্যুতায়িত হন এবং মারা যান।
অনিকের মামা আলম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মিরপুর-১০-এ থাকি। রিকশা চালাই। খবর পেয়ে সাথে সাথে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনিকের বাবা মো. বাবুল মিয়া নেত্রকোণা থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি খালিয়াজুড়ি উপজেলার সাতগাঁও গ্রামে। এক বছর আগে অনিক বিয়ে করে। তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। ঢাকাতে সে একাই থাকত।
• ‘এক আঙুল পানি বাড়লেই আমিও মারা যেতাম’
হাছান নামে ঝিলপাড় বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, আগের দিন বুধবার বিকেলেই অনিকের স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। আর গতকাল রাতে সে মারা গেল।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে আমরা ঘরের ভেতরে ছিলাম। মানুষের আওয়াজ শুনে বাইরে আসি। দেখি অনিকও সেখানে পড়ে আছে। অনেকে বাঁশ দিয়ে তাদের সরানোর চেষ্টা করে। অনেকক্ষণ পর পানি কমলে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অনিক বস্তির গ্যারেজেই থাকত।
গতকাল রাতে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে ঢাকার অনেক সড়কের মতো পানি জমে যায় মিরপুরে কমার্স কলেজ–সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির সামনের সড়কেও। জলমগ্ন ওই সড়কে বিদ্যুৎস্পসৃষ্ট হয়ে মারা যান একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজন।
নিহতরা হলেন—মিজান (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫), মেয়ে লিমা (৭) এবং রিকশাচালক অনিক। মিজানের আরেক ছেলেও বিদ্যুৎস্পসৃষ্ট হয়। ৭ মাস বয়সী ওই শিশুকে উদ্ধার করেন অনিক। শিশুটি এখন ভালো আছে।
এমএসআই/এনএফ