টানেল উদ্বোধন উদযাপনের অপেক্ষায় আমরা : মুখ্য সচিব
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহু প্রতীক্ষার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর তিনি এখানে জনসভায় বক্তব্য দেবেন। আমরা আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করতে চাই, যেন সারা বাংলাদেশের মানুষ এটি নিয়ে গর্ব করে। তিন দশমিক তিন এক কিলোমিটারের এ টানেল। এখানে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটে গাড়ি পার হওয়া যাবে। নদীর ১৮ থেকে ৩১ মিটার তলদেশ দিয়ে গাড়ি চলে যাবে, আমরা এ দিনটির অপেক্ষায় আছি।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে, তিনি সফরসঙ্গীদের নিয়ে টানেল পাড়ি দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রান্তে গিয়ে আবার ফিরে আসেন।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে যে টানেল যাচ্ছে, সেটি দেখার জন্য এসেছি। এটি সরকারের একটি সিগনেচার প্রজেক্ট। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের অসাধারণ কর্মনৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় সাফল্য, অনেক বড় গর্ব। এ টানেল শুধু দুই পাড়কেই সংযুক্ত করবে না, এখানে ওয়ান সিটি টু টাউনও বাস্তবায়ন হয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমরা একে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। এছাড়া দু’পাড়ে অবকাঠামোগত যে বিশাল উন্নয়ন হয়েছে এবং যা আগামীতেও হবে তা আমরা ধরে রাখতে চাই।
টানেলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতোমধ্যে দুটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের কাজ হয়ে গেছে। পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, টুরিস্ট পুলিশও টানেলের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য সিডিএ একটি প্রকল্প নিয়েছে। শিগগিরই সেটার কাজ শুরু হবে। নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার, সবটুকুই আমরা করব।
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, টানেল শতভাগ ব্যবহার উপযোগী হয়ে গেছে। এরমধ্যেই আমরা টেস্ট করেছি। আগামী ২৩ তারিখ এখানে ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশের সমন্বয়ের ইমার্জেন্সি মুডে ট্রায়াল করব।
জলোচ্ছ্বাসে এতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটো ফ্লাডগেট আছে, ট্রায়াল করে দেখা হয়েছে। বিগত সময়ের জলোচ্ছ্বাসের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকম্পেও টানেল নিরাপদ থাকবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, মাটির ২০ মিটার নিচে ভূকম্পন অনুভূত হয় না। টানেল আরও নিচে। ফলে ভূমিকম্পে টানেলের ওপর প্রভাব পড়বে না।
পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসেবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। সবশেষ গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের প্রথম টিউবের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
/এমআর/এফকে/