দাম না কমালে ডিম নিয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ
ভারতে প্রতি পিস ডিম সাড়ে ৬ টাকা
প্রয়োজনে আরও বেশি ডিম আমদানির অনুমতি
খামারি ও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী দেশের বাজারে প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবুও বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিমের দাম না কমালে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে; পর্যায়ক্রমে আরও বেশি পরিমাণে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
আগস্ট থেকে ডিমের অস্বাভাবিক দাম
২০২২ সালের আগস্টে প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিল। চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। তবে আগস্ট থেকে ফের বাড়তে থাকে ডিমের দাম। একপর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম ঠেকে ১৭৫ টাকায়।
আরও পড়ুন- ভারত থেকে আসছে ৪ কোটি ডিম
ডিমের এমন দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এরপরই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে আমদানির প্রসঙ্গ।
গত ১৩ আগস্ট বিকেলে ডিমের দাম ইস্যুতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈঠকে ডিমের উৎপাদন খরচ নিয়ে আলোচনা হয়। খামারিরা জানান- একটি ডিম উৎপাদনে গড়ে ১০ টাকা ৫০ পয়সা করে খরচ হয়। এরপর খামারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১১ টাকার বেশিতে বিক্রি না করার তাগিদ দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে খুচরা পর্যায়ে একটি ডিমের দাম যেন ১২ টাকার বেশি না হয়, সে বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়।
এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ তথ্য জানান।
এখনো বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে
সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। সরকার প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪৪ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও এখন ১৫০-১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকার বদলে ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোমবার বিকেলে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দামের এ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।
ভারতে প্রতি পিস ডিমের দাম সাড়ে ৬ টাকা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, অতিরিক্ত সরবরাহ বিবেচনায় দেশে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই।
আরও পড়ুন- ‘আমদানি করলে একটি ডিম হবে ২০ টাকা’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাজারে ডিমের দাম প্রতি পিস ছিল ৫ দশমিক ৬১ টাকা। আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিটি লাল ডিম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ দশমিক ৫০ টাকা এবং প্রতিটি সাদা ডিম পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি
অস্থিতিশীল ডিমের বাজারে স্থিতি আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) দেশের চার প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।
অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং, অর্নব ট্রেডিং লিমিটেড।
আমদানির মাধ্যমে কঠোর বার্তা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মিটিং করে বলেছিল খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিৎ নয়। এরপর আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবুও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। এটি মেনে নেওয়া যায় না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি এবং এই অনুমতির মাধ্যমে খামারি ও ব্যবসায়ীদের কাছে কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, ডিমের দাম না কমলে আরও আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। এর ফলে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল আরেকজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিমের যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা কিন্তু খামারি ও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী। এমন না যে তাদের চাওয়ার বাইরে যাওয়া হয়েছে। তবুও কিন্তু বাড়তি দামেই ডিম বিক্রি হচ্ছে। এতে করে সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। সেজন্য এই আমদানির অনুমতি।
প্রয়োজনে আরও বেশি ডিম আমদানির অনুমতি
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, চারটি কোম্পানিকে এক কোটি করে মোট চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা এ অনুমতি দিয়েছি। আমাদের প্রতিদিন প্রায় চার কোটি ডিম প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে আমরা মাত্র একদিনের ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন হলে আমরা আরও বেশি ডিম আমদানির অনুমতি দেব।
আরও পড়ুন- ‘ডিম আমদানি করা হলে পথে বসবে পোল্ট্রি শিল্প’
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দেশীয় উৎপাদিত ডিমকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। তবে এই সুযোগ নিয়ে ডিমের অতিরিক্ত দাম নেওয়াটা যৌক্তিক নয়।
সাধারণ মানুষের স্বার্থটা দেখতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
ডিম আমদানির অনুমতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা অনেক কিছু যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, তেল আমদানি করে থাকি। পোল্ট্রি ফার্মাররা এই মুহূর্তে অনেক লাভ করছেন। কাজেই সাধারণ মানুষের স্বার্থটা দেখতে হবে। তারা তো এতো দাম দিয়ে কিনে খেতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা ডিম আমদানি করছি। কারণ, যারা রাতারাতি অনেক অর্থবিত্ত করতে চায় তাদের যেন সুবুদ্ধির উদয় হয়।
এসএইচআর/এমজে