পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরও ২০ মামলা হচ্ছে
আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) কারিশমায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স থেকে লোপাট হয়েছে আরও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। যেখানে পি কে হালদার চক্র ২০টির মতো কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণের নামে ওই টাকা বের করে নিয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও মিলেছে অকাট্য প্রমাণ। তাই পি কে হালদারসহ অন্তত ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। এমনটি জানিয়েছে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র।
দুদকের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল) ও এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে প্রায় ২০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মর্টগেজ ছাড়াই প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রদানের প্রমাণ পাওয়া গেছে চক্রটির বিরুদ্ধে।
আরবি এন্টারপ্রাইজ, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ, তামিম অ্যান্ড তালহা এন্টারপ্রাইজ, ক্রসরোড করপোরেশন, মেরিন ট্রাস্ট নিউটেক, এমএসটি মেরিন, গ্রীন লাইন ডেভেলপমেন্ট, মেসার্স বর্ণসহ প্রায় ২০টির মতো অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া ওই ঋণ নিয়ে চলেছে লুটপাট। বিভিন্ন খাত থেকে কৌশলে ধাপে ধাপে অর্থও বের করে নেওয়া হয়েছে। লুটপাটের নেতৃত্ব দিয়েছেন পি কে হালদার, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ঊর্ধ্বতনরা। যে কারণে তাদেরসহ প্রায় ৭০ জনকে আসামি করে আরও ২০টি মামলার অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরি করছে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বের একটি দল।
শিগগিরই কমিশনে মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হবে। অনুমোদন সাপেক্ষে চক্রটির বিরুদ্ধে মামলাগুলো হতে পারে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান কাজের তদারককারী কর্মকর্তা ও দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাজ অনুসন্ধান করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা। অনুসন্ধান কাজ চলছে। মামলা হলে জনসংযোগ দফতরের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
অন্যদিকে, অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের কাছে জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এর আগে পি কে হালদার ইস্যুতে আমরা ১৫টি মামলা করেছি। অনুসন্ধান পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। আপাতত এটুকুই জানেন। আরও বেশি জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ার বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।
কোম্পানিগুলো হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল।
দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে আরও একটি টিম তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ওই টিম এরই মধ্যে ১৫টি মামলা করেছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০ মামলা এবং ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচ মামলা করে দুদক।
গ্রেফতার এবং স্বীকারোক্তি
পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ছাড়াও পি কে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক এবং সর্বশেষ অবান্তিকা বড়াল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আরএম/এমএইচএস