কর্ণফুলী টানেল নিয়ে অপপ্রচার চালালে ব্যবস্থা
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নিয়ে অপপ্রচার চালানোর বিষয়ে সতর্ক করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে টানেলের উদ্বোধন নিয়ে প্রস্তুতি সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন।
এসময় বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেন, টানেল আমাদের দেশের সম্পদ। দেড় মাস পর এর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এর আগে টানেল নিয়ে অপপ্রচার করা যাবে না। যদি কেউ এরকম কাজে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর টানেলের উদ্বোধন করবেন। টানেলের টোলহার নির্ধারণ করা হয়ে গেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সচিব বলেন, টানেলের ধারণা আমাদের জন্য নতুন। এটি সাধারণ সেতু এবং সড়ক থেকে আলাদা। এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এখানে ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলবে। এ কারণে মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার গাড়ি না চললে টানেল এবং টানেল ব্যবহারকারীরা নিরাপদ থাকবে।
টানেলের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ বলেন, টানেলের দুই সড়কপথের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। টোল প্লাজা ও অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। পুরো প্রকল্পের ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অক্টোবরে উদ্বোধনের পর যানচলাচল শুরু হয়ে যাবে এবং এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কাজও চলতে থাকবে।
সভায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী, টানেলে প্রাইভেটকার ও জিপকে দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসকে ২৫০ টাকা, পিকআপকে ২০০ টাকা, ৩১ বা তার চেয়ে কম সিটের বাসকে ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসকে দিতে হবে ৪০০ টাকা। আবার ৫ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক থেকে টানেলে টোল নেওয়া হবে ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে।
এছাড়া ৩ এক্সেল পর্যন্ত ট্রাক চলাচলে টানেলে টোল দিতে হবে ৮০০ টাকা এবং ৪ এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারকে ১ হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য দিতে হবে ২০০ টাকা।
জানা গেছে, নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী- টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসেবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টানেল চালু হলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে ওঠবে নতুন শিল্পকারখানা।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। সবশেষ গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের প্রথম টিউবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমআর/এফকে