পাসপোর্ট অফিসে আসা মানুষের ‘উ’ শব্দটিও শুনতে চাই না
পাসপোর্ট অফিসে আসা মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের ‘উ’ শব্দটিও শুনতে চান না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পূর্ব (আফতাবনগর) ও ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মদপুর) এবং পাসপোর্ট বাতায়নের (কল সেন্টার) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আফতাবনগরের পাসপোর্ট অফিসের সামনে উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। এ ঘোষণার পর থেকে আমরা এমআরপি পাসপোর্ট হাতে নিলাম। এমআরপি হাতে নিয়ে আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। সব প্রতিবন্ধকতা সামলে তখন এমআরপি চালু হয়েছিল। এরপর আমরা ই-পাসপোর্টের জগতে পা রাখি। আমাদের পাসপোর্টের মানও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। আগে যেমন আমাদের পাসপোর্টের মান নিচের দিকে ছিল, এখন ধীরে ধীরে উন্নতি করে এটা উপরের দিকে যাচ্ছে। আমাদের পাসপোর্ট এরইমধ্যে বিশ্বমানের হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং সামনে আরো এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাত্রা শুরু করেছি। ই-পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশনের ই-গেট স্মার্ট বাংলাদেশের একটি ইঙ্গিত বহন করছে। এছাড়া খুবই দ্রুত ই-ভিসাও চালু হতে যাচ্ছে। আমরা প্যাসেঞ্জার অ্যাডভান্স ইনফরমেশনও চালু করতে যাচ্ছি। যদিও এটি আমাদের মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নয়, সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে প্যাসেঞ্জার অ্যাডভান্স ইনফরমেশন চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা চালু হলে কোনো যাত্রী টিকিট কাটলে আমরা জানতে পারবো কে বাংলাদেশে আসছেন বা কে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাচ্ছেন। আমরা দেশের ৭১টি পাসপোর্ট অফিস এবং বিদেশে মোট ৩২টি জায়গা থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করতে পেরেছি। বিদেশে আমাদের যেখানে পাসপোর্ট অফিস আছে প্রত্যেকটি জায়গা থেকেই আমরা দ্রুত ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করব।
এ সময় নতুন উদ্বোধন হওয়া পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, এই নতুন দুটি পাসপোর্ট অফিস থেকে জনগণ সুবিধা পাবে এবং সেবা গ্রহণ করবে। এখানে যারা কাজ করবেন তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, আপনারা জনগণের সেবা করবেন এবং জনগণের সেবার জন্যই কিন্তু আপনারা। কাজেই পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা জনগণের 'উ' শব্দটিও আমরা শুনতে চাই না। আপনারা যতই তাদের সেবা দিবেন ততই আপনারা সুনাম অর্জন করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বদলি দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বাংলাদেশকে বদলে দেবেন। তিনি যথার্থই বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। আমাদের নেতা প্রধানমন্ত্রী দেশকে ভালোবাসেন এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। দেশের যে প্রান্তে গিয়েছি সেখানেই প্রধানমন্ত্রী জয়জয়কার। এই দেশের মানুষ মনে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প শুধুমাত্র শেখ হাসিনা, আর কেউ নেই। এদেশের মানুষ আর অন্ধকারে যেতে চায় না। আমরা দেখেছি জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যা ও গাড়ি পোড়ানোর দৃশ্য। সেজন্য সারা বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে তৈরি হচ্ছে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীকে জয়যুক্ত করে ক্ষমতায় আনবে। এজন্য নির্বাচনের জন্য মানুষ তৈরি হচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষে ইমিগ্রেশনে ই-গেট চালু হয়েছে সেখানে কোনো যাত্রী যেতে চাইলেও ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের নিরুৎসাহিত করছে, সেখানে অনেকটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে, এবিষয়ে পদক্ষেপ কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা এখনও ট্রায়াল বেসিসে চলছে। যেকোনো কিছু চালুর আগে ছোটখাটো সমন্বয়হীনতা হয়ে থাকে। আপনি নতুন বাড়িতে উঠলেও দেখবেন যে লাইট ঠিকমতো জ্বলে না, সুয়ারেজে পানিটা ঠিকমতো পাস হচ্ছে না। আমাদের নজরে যেগুলো আসছে সেগুলো আমরা ইমিডিয়েটলি ব্যবস্থা নিচ্ছি। ই-গেট যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়ে সে বিষয়টি অবশ্যই দেখবো।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী।
এদিকে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর দেশের নাগরিকদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর, নিরাপদ ও উন্নতমানের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন সেবা এবং বাংলাদেশে আসা সব বিদেশি নাগরিকের জন্য উন্নতমানের ভিসা সেবা দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পূর্ব (আফতাবনগর), ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মদপুর) ও কল সেন্টার (পাসপোর্ট বাতায়ন-১৬৪৪৫) এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, এরইমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৬৪টি জেলায় মোট ৬৯টি আঞ্চলিক অফিস থেকে দেশের নাগরিকদের পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ৭টি বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস থেকে বাংলাদেশে আসা বিদেশি নাগরিকদের ভিসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরে ৪৪টি ই-গেট স্থাপনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় নতুন ২টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস (ঢাকা পূর্ব, আফতাবনগর ও ঢাকা পশ্চিম, মোহাম্মদপুর) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সংখ্যা হলো ৭১টি।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ঢাকা পূর্ব (আফতাবনগর) এর আওতাধীন থানাগুলো হলো- মুগদা, সবুজবাগ, শাহাজাহানপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মতিঝিল, পল্টন, হাতিরঝিল, বাড্ডা। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মদপুর) এর আওতাধীন থানাগুলো হলো- সাভার, ধামরাই, মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুস-সালাম, শাহ আলী, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট। একইসঙ্গে পাসপোর্ট বাতায়ন তথা কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৪/৭ যেকোনো নাগরিক বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে ১৬৪৪৫ এবং প্রবাস থেকে ০৯৬৬৬৭১৬৪৪৫ নম্বরে কল করে পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা সংক্রান্ত সকল ধরনের তথ্য সেবা পাবেন।
আরও জানায় যায়, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট ও ই-গেইট ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটালাইজড ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নাগরিকদের পাসপোর্ট সেবার মানোন্নয়নে এবং দ্রুত ও নিরাপদ ইমিগ্রেশন সেবা নিশ্চিতকল্পে অত্র অধিদপ্তরের প্রতিটি সদস্য সদা সচেষ্ট।
এমএসি/জেডএস