অর্থ পাচারের ঘটনা উন্মোচনে শুল্ক গোয়েন্দাকে সতর্ক সাধুবাদ টিআইবির
রপ্তানি-আমদানির আড়ালে ৩৩টি তৈরি পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউজ ৬ বছরে প্রায় ৮২১ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা উন্মোচনে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে সতর্ক সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির এক বিবৃতিতে এমন আহ্বান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনা প্রমাণ করে যে- বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচারের ঘটনা খুঁজে বের করে তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রয়েছে। তবে ৮২১ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা আসলে হিমশৈলের চূড়ামাত্র।’
তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) ২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়, টাকার অংকে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ হবে বছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি ডলার। অথচ, সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা সংকট মোকাবিলা করতে আইএমএফ থেকে সাড়ে তিন বছরের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ করতে হয়েছে। যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। অস্বীকার করার উপায় নেই, অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যেমন বাংলাদেশকে আইএমএফ-এর দ্বারস্থ হতে হত না, তেমনি দেশে রিজার্ভ সংকটও তৈরি হত না।’
বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো ও তাদের সদস্যদের শুদ্ধাচার চর্চায় উদ্যোগী হওয়া জরুরি। অন্যদিকে, দেশে অনেক সময়ই অর্থপাচারের ঘটনা উন্মোচন হলেও জড়িত ব্যক্তিরা পরিচয় ও অবস্থানের বলে পার পেয়ে যান। বিত্তশালী, রাজনৈতিক আনুকূল্য বা অন্যভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না, যার দৃষ্টান্ত অতি সম্প্রতিও হতাশাজনকভাবে দেখতে হয়েছে। ৮২১ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের সব প্রকার অনুকম্পা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে, পরিচয় ও অবস্থান নির্বিশেষে আইনানুগভাবে সৎ সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে এ ধরনের ঘোরতর অপরাধ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে।’
অর্থপাচার প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা খর্ব করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত অনেকগুলো অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত দুদকের এখতিয়ার থেকে সরিয়ে নেওয়ার ফলে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে দুদক তার প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ সংশোধন করে দুদকের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আরএম/এফকে
