বিধিনিষেধ চলাকালে ও পরে করণীয়
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভাইরাসটিতে শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৭ জন, যা একদিনে শনাক্তের নতুন রেকর্ড। একই সময়ে মারা গেছেন ৫৩ জন।
চলমান করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় সরকার সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই সাতদিন এবং এর পরবর্তী সময়ে করণীয় শীর্ষক নির্দেশনা সুপারিশ করেছে ইনিশিয়েটিভ ফর হেলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএইচডি) নামে একটি সংগঠন। রোববার (৪ এপ্রিল) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জনসাধারণ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এসব নির্দেশনা তুলে ধরে সংগঠনটি।
কোভিড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত যা করণীয়
১. জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজকর্মী, এনজিওকর্মী, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে সর্বত্র মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। প্রয়োজনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করা। দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করা।
২. স্বাস্থ্যবিধি মানা, কোভিডের প্রকৃত ঝুঁকি বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিকরণে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া ও প্রয়োজনে হেলথ কমিউনিকেশন এক্সপার্টদের পরামর্শে কার্যকর কমিউনিকেশন মেটেরিয়াল তৈরিকরণ এবং তদানুযায়ী কার্যকরীভাবে প্রচারণা চালানো।
৩. কোভিড টিকা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং প্রয়োজনে অনস্পট রেজিস্ট্রেশন চালু করা।
৪. টিকা নিতে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজকর্মী, এনজিওকর্মী, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যাপক প্রচারণা চালানো।
৫. টিকার কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে বিদ্যমান সংশয় দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৬. ফ্রন্টলাইন হেলথ ওয়ার্কারদের মনোবল বৃদ্ধি এবং উৎসাহিত করার জন্য বাস্তবতার নিরিখে প্রণোদনা প্যাকেজ যৌক্তিকভাবে সংশোধন করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৭. জিনোম সিকুয়েন্সিং ও সেরো প্ৰিভালেন্স স্টাডি রেগুলার করা যাতে প্রকৃত অবস্থা জানা যায়। বিশেষত, হাসপাতালের শয্যার কী অবস্থা তার রিয়েল-টাইম আপডেট ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে প্রকাশ করা।
৮. গবেষণা ও তথ্য শেয়ারিং জোরদার করা। কোন তথ্য কার কাছে পাওয়া যাবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা।
সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধকালে করণীয়
১. প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের পুল তৈরি করা, ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ করা এবং তা কার্যকর করা। জনগণকে এ বিষয়ে অবহিতকরণে কার্যকরী প্রচারণা চালানো।
২. কোভিড টেস্টের স্যাম্পল কালেকশন সেন্টার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চালু করা এবং শহরাঞ্চলে জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৩. কোভিড টেস্টের সরকার নির্ধারিত ফি রহিতকরণ।
৪. সরকারি ব্যবস্থাপনায় কিছু গণপরিবহন চালু রাখা যাতে ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি এবং রোগীদের যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।
৫. কোভিড চিকিৎসার পাশাপাশি হাসপাতালে মাতৃত্বকালীন সেবাসহ অন্যান্য সব সেবা চালু রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি হাসপাতালে কোভিড রোগী এবং নন কোভিড রোগী চিহ্নিতকরণে ট্রায়াজ সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে।
৬. বিধিনিষেধের সময় দীর্ঘ (এক সপ্তাহের বেশি) হলে জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক দরিদ্র মানুষদের চিহ্নিতকরণ এবং নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে হবে।
বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার পর করণীয়
১. প্রথম দফায় ৩১ মে, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়সহ সব প্রকার জনসমাবেশ এবং জনসমাগম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ।
২. সারাদেশে পর্যটনকেন্দ্র এবং বিনোদনকেন্দ্র ৩১ মে, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধকরণ।
৩. ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ অধিক সংক্রমিত এলাকা থেকে ঈদ বা অন্য কোনো উৎসবের সময় এলাকা ত্যাগ করা নিষিদ্ধকরণ।
কোভিড-১৯ রোগী ব্যবস্থাপনা (সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে)
১. আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব জেলা হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং সরকারি ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাই-ফ্লো নেজাল কেনোলা বা রিব্রিদার মাস্ক ব্যবহার উপযোগী অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কোভিড চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং অপ্রয়োজনীয় রেফারাল কমানো।
২. আগামী তিন মাসের মধ্যে সব জেলা হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং সরকারি ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্যকরী সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে।
৩. কম গুরুতর কোভিড ও নন কোভিড রোগীকে হোম কেয়ারে রাখার জন্য উৎসাহিত করা এবং স্থানীয় ডাক্তারদের মাধ্যমে তাদেরকে সেবা প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে, স্বাস্থ্য বাতায়ন ও অন্যান্য ন্যাশনাল হেল্পলাইনকে শক্তিশালী করে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বিভাগীয় ও জেলা সদর পর্যায়ের উপযুক্ত প্রাইভেট, এনজিও এবং অলাভজনক হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাঠামো গড়ে তুলতে নির্দেশনা ও সহযোগিতা করা। এক্ষেত্রে সরকারকে সেবার মান নিশ্চিতকরণ এবং ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। উল্লেখ্য, নির্ধারিত মূল্যের তালিকা হাসপাতালের প্রবেশ মুখে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. বড় হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
টিআই/আরএইচ