লকডাউনে আতঙ্কে রাইড শেয়ারিং চালকরা
করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। লকডাউনের খবরে জীবিকা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলের চালকরা।
রাজধানীর মোটরসাইকেল চালকরা বলছেন, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে গত ৩১ মার্চ সরকার ১৮টি নতুন নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনার পর পরই সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ করে দেয় দুই সপ্তাহের জন্য।
রাইড শেয়ারিং বন্ধ করে দিলেও নির্দেশনার পর খ্যাপ (যাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে) যাত্রীদের পরিসেবা করতেন তারা। এতে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশসহ নানা বাধা এলেও কোনোমতে দিন চলে যাচ্ছিল তাদের। কিন্তু এখন লকডাউন ঘোষণার পর এই ব্যবস্থাও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এই আশঙ্কার কারণ হিসেবে রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরা বলছেন, লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর থেকে মানুষজনের চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত করবে প্রশাসন। ফলে যাত্রী থাকবে না। এতে মোটরসাইকেল চালকদের রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এ অবস্থায় তারা সংসার কীভাবে চালাবে তা নিয়ে চিন্তিত।
শনিবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর নতুন বাজার, বাড্ডা, গুলশান গুদারাঘাট ও রামপুরা এলাকায় কয়েকজন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
এসব এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের জন্য রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের কাছে আর তেমন যাত্রী আসছেন না। এছাড়া এক জায়গায় তারা পুলিশের ভয়ে বেশিক্ষণ থাকতেও পারছেন না। রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল দেখলেই পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া লকডাউন ঘোষণার পর পুলিশের এই তৎপরতা আরও বেড়ে গেছে।
সাতক্ষীরার জামাল গত সাত মাস ধরে রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাতক্ষীরায় চিংড়ি মাছের ঘেরে কাজ করতাম। কিন্তু গত বছর শুরু হওয়া করোনা মহামারির কারণে ঘের মালিকদের প্রচুর লোকসান হয়। তাই সেখানে চাকরি হারিয়ে ঢাকায় গত সাত মাস ধরে রাইড শেয়ারিং করে বাড়িতে টাকা পাঠাই। কিন্তু গত ৩১ মার্চ রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রথম ধাক্কা লাগে। তারপরেও খ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী উঠিয়ে কোনো মতে চলে যাচ্ছিল, এর মধ্যে লকডাউনের ঘোষণা। লকডাউনে তো রাস্তা ফাঁকা থাকবে। যাত্রী না থাকলে আমরা কীভাবে টাকা আয় করব? এখন কীভাবে ঢাকা থাকব আর বাড়িতেইবা কীভাবে টাকা পাঠাব তা বুঝতে পারছি না।
রাজধানীর বসিলার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ এক বছর আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। কিন্তু গত বছর করোনার শুরুর দিকে চাকরি চলে যায়। তারপর থেকে তিনি রাইড শেয়ারিং করে সংসার চালান।
রাজধানীর গুলশানে গুদারাঘাটে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ আব্দুল আজিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের কথা শুনে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠেছে। এখন ইনকাম বন্ধ হলে পরিবার নিয়ে ঢাকা শহরে কীভাবে থাকব? আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাব, আমরা যারা রাইড শেয়ারিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য একটা উপায় বের করতে। না হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন কঠিন হয়ে যাবে।
তাদের মতো আরও অনেক রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে রাজধানীবাসী অনেক উপকৃত হয়েছেন। স্বল্প ভাড়ায় খুব দ্রুত যাত্রীরা নিজের কর্মস্থলে নিরাপদে যেতে পারছেন। রাজধানীবাসীর কথা চিন্তা করে হলেও সরকারের এখন উচিত রাইড শেয়ারিংয়ের চালকদের জন্য কিছু করা।
এর আগে গত ৩১ মার্চ করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি কারণে সরকার ১৮টি নির্দেশনা দিয়েছে। এর আলোকে বাসে অর্ধশত সিটে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বন্ধ করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তখন বিআরটিএ বলে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সেটা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী দুই সপ্তাহ মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। এ সংক্রান্ত বিআরটিএ’র এক অফিস আদেশে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত (আপাতত দুই সপ্তাহ) রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এমএসি/এইচকে